কুমিল্লায় গোমতীর পাড়ে দেখা মিলেছে মৃত্যুদূত পার্থেনিয়ামের

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

Spread the love

অধিকাংশ উদ্ভিদই মানুষের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। তবে পরিবেশে প্রাণঘাতী বিষাক্ত উদ্ভিদও রয়েছে। এরকমই একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম। এই উদ্ভিদ পতিত জমি ও সড়কের পাশে জন্মে থাকে। তবে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে পার্থোনিয়ামের রয়েছে ভেষজ গুণ।
এদিকে কুমিল্লার গোমতীর পাড়ে এই উদ্ভিদের দেখা মিলছে। অন্যান্য উদ্ভিদের সাথে এ উদ্ভিদটি গোমতীর পাড়ে সদর্পে বিরাজ করছে। তবে অনেকেই জানেন না এই উদ্ভিদের ক্ষতিকর দিক। ফলে এই উদ্ভিদের বিষক্রিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, পার্থেনিয়ামের ইংরেজি নাম Parthenium । এটি ডেজি পরিবারের মধ্যে সূর্যমুখী উপজাতিদের উত্তর আমেরিকান গুল্ম প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এটি একবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় বিষাক্ত উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ মানুষ ও প্রাণীকুলের সংস্পর্শে এলে এলার্জি, তীব্র জ্বর, বদহজম, উচ্চ রক্তচাপ, তীব্র মাথাব্যথাসহ আরও নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পার্থেনিয়ামের বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও এই উদ্ভিদের প্রভাবে মানবদেহে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এই আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে এর ফুলের রেনুতে অবস্থিত সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন জাতীয় পদার্থ পার্থেনিন, এই উদ্ভিদের শরীরে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক ক্যাফেইক অ্যাডিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড মানবদেহের বা গবাদিপশুর ক্ষতস্থানে লেগে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারে। হঠাৎ দর্শনে এটিকে ধনিয়া গাছ বলে ভ্রম হবে। এগাছে সবুজ খাঁজকাটা পাতা ও ছোট ছোট গোলাকৃতির সাদা ফুল ধরে। এটি প্রাণিকুলের পাশাপাশি যেকোনো ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এই পার্থেনিয়ামের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মানুষ, প্রাণিকুল ও ফসলের ক্ষতিকারক এই পার্থেনিয়াম দেখামাত্রই ধ্বংস করে ফেলার কথা বলছেন কৃষি বিভাগ।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা বলছেন, এই আগাছাটি বাহ্যিকভাবে মানুষ ও গবাদিপশুর ক্ষতিসাধন করলেও এর রয়েছে ভেষজ গুণ। এই উদ্ভিদ থেকে মানুষের প্রচণ্ড জ্বর, বদহজম, টিউমার, আমাশয়সহ নানা জটিল রোগের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে। এমনকি এই উদ্ভিদ দিয়ে গবেষকরা মরণব্যাধি ক্যানসারের প্রতিষেধক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
পার্থেনিয়াম নিয়ে সুখবর হচ্ছে, এ উদ্ভিদের বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার রেকর্ড এখনো আমাদের দেশে নেই। তবে এখনই এ বিষয়ে জনসচেতনতা না বাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে এই উদ্ভিদের বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পার্থেনিয়াম বিষয়ে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
পার্থেনিয়াম বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তারা কখনো এরকম নামের কোন উদ্ভিদের কথা শোনেননি বলে জানান। এর বিষক্রিয়ার বিষয়েও তারা জানেন না। তারা বলছেন, এ ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
স্থানীয় বাসিন্দা একরামুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে পার্থেনিয়াম বিষয়ে পড়েছি। এই উদ্ভিদের ক্ষতির দিক জেনেছি। তবে আমাদের কুমিল্লায়ও পার্থোনিয়াম দেখা গেছে তা শুনিনি। পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকর দিক সাধারণ মানুষের মধ্যে উপস্থাপন করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।’
এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, ‘মানব কল্যাণে বহু গাছ, উদ্ভিদ ও লতা ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে আমাদের পরিবেশে কিছু বিষাক্ত উদ্ভিদও রয়েছে। পার্থেনিয়ামও একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ। কিন্তু বাহ্যিকভাবে এটি বিষাক্ত হলেও এর রয়েছে ভেষজ গুণ। প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে এই উদ্ভিদ মানুষের রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এটি চর্মরোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে কার্যকর, তবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুত প্রণালী না জেনে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে সহজেই মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে এরকম স্থানে এই উদ্ভিদ না থাকা বাঞ্ছনীয়।’

  • ব্রাহ্মণপাড়া