আধুনিক চাষ যন্ত্রের বদৌলতে ব্রাহ্মণপাড়ায় বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে হালচাষ

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

Spread the love

‘তোর মায় চইছে হাল,তোর বাবায় চইছে হাল, তোর লাইগা রাইখা গেছে লাঙ্গল আর জোায়ল। গ্রাম্য এই প্রবাদ থাকলেও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না গরু দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য। এক সময় এই অঞ্চলের ফসলি মাঠে মাঠে গরু দিয়ে হাল চাষের দৃশ্যে গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ ফুটে উঠতো। সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক চাষ যন্ত্রের বদৌলতে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীনকাল থেকে জমি আবাদে চলে আসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গরু-লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষের চিত্র। গরু-লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ফসল ও জমির মাটির জন্য গরু দিয়ে হালচাষ উত্তম। গরু দিয়ে হাল চাষের ফলে লাঙ্গলের ফলা মাটিতে গেঁথে গিয়ে মাটিকে ওলট-পালট করে দেয়। এতে মাটির নিচের স্তরের পুষ্টিগুণ উপরে উঠে আসে এবং মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্ট নিচে চাপা পড়ে জৈব সারে পরিণত হয়। এছাড়া মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং মাটির আদ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে গরু দিয়ে হালচাষ। তবে কৃষিকে যুগোপযোগী করতে এবং কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার অনস্বীকার্য। স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এক সময় গরু দিয়ে হাল চাষ ব্যতীত ফসল আবাদের আর কোনো অন্য উপায় ছিল না। তাই প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে ছিল হালচাষ উপযোগী গরু, লাঙ্গল, জোয়াল ও মই। এগুলো ছাড়া কোনো গৃহস্থ পরিবার পরিকল্পনাই করা যেতো না। ভোরবেলা গৃহস্থ গরু লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে হালচাষ করতে মাঠে বেরিয়ে পড়তো। অনেকেই অন্যের ক্ষেতে গরু দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কৃষিতে আমূল পরিবর্তন ও আধুনিক চাষ যন্ত্রের ব্যবহার প্রান্তিক কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছার কারণে দিন দিন গৃহস্থ পরিবারেও এসেছে পরিবর্তন। এখন আর গৃহস্থ পরিবারে নেই লাঙ্গল-জোয়াল, নেই হালচাষ উপযোগী গরু। যার ফলে এই জনপদ থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে আবহমান বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য গরু লাঙ্গলের হালচাষ। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন, একসময় এই জনপদের ফসলি মাঠের দিকে নজর পড়তে দেখা যেতো গরু-লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য। এখন হাল চাষের জন্য মেশিন বেরিয়েছে। মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করা যায়। যার ফলে দিন দিন গ্রামীণ ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরু, লাঙ্গল, জোয়াল ও মই দিয়ে হালচাষ। আধুনিক সুবিধা পেলেও আমরা হারাতে বসেছি গ্রামবাংলার চিরচেনা এই ঐতিহ্য। স্থানীয় বাসিন্দা ওহাব মিয়া বলেন, ফসলি জমি আবাদে এক সময় গরু দিয়ে হাল চাষের বিকল্প ছিল না। প্রতিটি মৌসুমে এই অঞ্চলের মাঠে মাঠে দেখা যেতো গরু দিয়ে হাল চাষে ব্যস্ত কৃষকরা। এতে বাঙালির ঐতিহ্য ফুটে উঠতো। কিন্তু কৃষিতে সমৃদ্ধি আসায় জমি চাষে এখন কৃষকরা আধুনিক চাষ যন্ত্র ব্যবহার করছে। ফলে গরু দিয়ে হাল চাষের গ্রামীণ ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, একটা সময় গরু লাঙ্গল ছাড়া জমি চাষের কথা চিন্তায় করা যেত না। ফসল ও জমির মাটির জন্য গরু দিয়ে হালচাষ উত্তম। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, কৃষিকে যুগোপযোগী করতে এবং কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার অর্থাৎ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে আমাদের যেতে হবে। খোরপোষ কৃষিকে বানিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

  • ব্রাহ্মণপাড়া