রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডে মা-মেয়েসহ কুমিল্লার ছয়জনের মৃত্যু

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

Spread the love

রাজধানী শহর ঢাকা। এক মহা ব্যস্ত নগরী। প্রতিটি মানুষ যেন মেশিনের মতোই ছুটে চলছে আপন গতিতে। প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার। কর্মচঞ্চল মানুষগুলো কেউ ছুটছে আপনজনদের সাথে দেখা করতে গ্রামের উদ্দেশ্যে। আবার কেউ নিকটাত্মীয় ও পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো রেস্টুরেন্টে খাবার নিয়ে ব্যস্ত। হরেক রকম মানুষের মিলন মেলা হলো ঢাকা। তাই মানুষগুলোও হরেক রকম কাজে ও চিত্ত বিনোদনে ব্যস্থ থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামের ৭তলা ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কুমিল্লা জেলার ৪টি উপজেলার ৬জন মৃত্যুবরণ করেছে। আদর্শ সদর উপজেলার ১জন, লালমাই উপজেলার ২ জন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মা-মেয়েসহ ২জন এবং মুরাদনগর উপজেলার ১জন। সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মা-মেয়ে ও ৩ খালাত বোনসহ কুমিল্লার ৬ জন মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁদের কেউ ওই ভবনের রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়েছিলেন আবার কেউ কাজে গিয়েছিল। অগ্নিকান্ডের ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাঁরা মারা যায়। নিহত ৬জন হলো- কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার হাতিগাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান (১৮) ও তাঁর দুই খালাতো বোন লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের চরবাড়িয়া গ্রামের ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২) ও সাদিয়া আফরিন আলিশা (১৩), ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের কান্দুঘর গ্রামের গোলাম মহিউদ্দিনের স্ত্রী লুৎফুন নাহার ও তাঁর মেয়ে জান্নাতিন তাজরী এবং মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের জয়ন্ত পোদ্দারের স্ত্রী পম্পা পোদ্দার (৪৬)। বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামের সাততলা ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান। ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার হাতিগাড়া গ্রামের নুসরাত জাহান (শিমু)। সে এবার ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। দুই খালাতো বোনের সঙ্গে ওই ভবনের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়েছিল। নুসরাতসহ তিন বোন অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছে। নুসরাতের খালাতো বোন ফৌজিয়া মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলো আর সাদিয়া ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়তো। নুসরাতের বাবা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আগুন লাগার পর নুসরাত ফোন করে বলেছিল, “আব্বু আমাকে বাঁচাও। আমাদের এখান থেকে বের করে নিয়ে যাও।” মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি, এর থেকে দুঃখের কিছুই হতে পারে না। পরে ওদের লাশ ঢাকা মেডিকেল থেকে সংগ্রহ করি।’ ফৌজিয়ার বাবা কোরবান আলী বলেন, ‘শনিবার ফৌজিয়াকে নিয়ে আমার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। মেয়েটির আর মালয়েশিয়া যাওয়া হলো না।’একই ঘটনায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের কান্দুঘর গ্রামের গোলাম মহিউদ্দিনের স্ত্রী লুৎফুন নাহার ও মেয়ে জান্নাতিন তাজরী মারা গেছেন। লুৎফুন নাহার ভিকারুন্ননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর চিকিৎসক দেখিয়ে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলো। সেখানেই তাঁরা মারা যান। গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার স্ত্রী দাঁতের ডাক্তার দেখিয়ে ফিরছিলো। ফেরার পথে ওদের কাচ্চি ভাইয়ে খেতে যেতে বলি। ওখান থেকে ওরা লাশ হয়ে ফিরলো। ’দুই মেয়ের জন্য রাতের খাবার নিতে ওই ভবনে গিয়েছিলেন গৃহবধূ পম্পা পোদ্দার (৪৬)। তিনি মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের জয়ন্ত পোদ্দারের স্ত্রী। তিনি মাঝেমধ্যে সামাজিক অনুষ্ঠানে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। তিন দিন আগেও নবীপুর গ্রামে এসেছিলেন। গত শনিবার বড় মেয়ে কানাডা থেকে ফিরলে ঢাকায় নাকি গ্রামের বাড়িতে সৎকার করা হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জয়ন্ত পোদ্দার পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। একটি প্রাইভেট অডিট ফার্মের মালিক। স্ত্রী পম্পা পোদ্দার গৃহিণী। এ দম্পতির তিন মেয়ে। বড় মেয়ে কানাডায় লেখাপড়া করছেন। ছোট দুই মেয়ে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকত।

  • কুমিল্লা