দেশে যখন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন চলছে তখনই সড়কগুলোতে অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের হাতে চলছে যানবাহন। যে বয়সে স্কুলে থাকার কথা সে বয়সে ড্রাইভিং এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত তারা। অবাক করার মতো কথা হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের হাতেই চলছে ইজিবাইকসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন যানবাহন। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি সড়কেই অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়ষ্করা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক নিয়ে। যে বয়সে খেলার মাঠে থাকার কথা তাদের, সেই বয়সে এখন তারা হয়েছে রাস্তার রাজা। শিশুরা এসব যানবাহনের চালকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে মহাসড়ক এখন ইজিবাইকের দখলে। চালকরা কোন নিয়মনীতি না জেনে না মেনে সড়কের মধ্যে চালাচ্ছে এসব ইজিবাইক। যেখানে সেখানে তাদের বাইক থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছে। চলাচলরত অসংখ্য ইজিবাইকের কারনে সড়কের মধ্যে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। এছাড়া চালকদের মধ্যে অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় হরহামেশায় ঘটছে দূর্ঘটনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা ইজিবাইক চালাচ্ছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ বছরের কম বয়সের কিশোরেরাও রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। আর এসব ইজিবাইক দিয়ে তারা যাত্রী নিয়ে সড়কে দ্রæতগতির যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করছে। এই সব ইজিবাইক চালকদের মধ্যে কেউ কেউ মাঠের কৃষি শ্রমিক অথবা আগে রিকশা/ভ্যান চালাতো। আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর। এদের শতকরা ৮০ জন চালকেই জানে না কীভাবে রাস্তায় ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত গ্রামাঞ্চলের সড়কে ৭জন অথবা ৫জন করে যাত্রী নিয়ে দ্রæত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। একজন ইজিবাইক চালক জানান, তিনি ৪ বছর ধরে ইজিবাইক চালিয়ে ৫ সদস্যের সংসারের জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকেরা আইন কানুন মানে না। কে কত টাকা আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। সচেতন মহলের অভিযোগ-এই অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ইজিবাইক চালকদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশা থেকে অন্য পেশায় নিয়োজিত করতে হবে। অথবা তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ চালক করে সড়কের ইজিবাইক চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া করোনা মহামারির পর থেকে ইজিবাইক চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাকালীন সময় অনেক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সব কল-কারখানা ও গার্মেন্টেসের কর্মীরা উপায়ান্তর না পেয়ে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইজিবাইক ক্রয় করে অথবা ভাড়া নিয়ে সড়কের চালাতে শুরু করে। কিছু প্রবাস ফেরত লোকজনও রয়েছে। যারা প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসে ইজিবাইক চালানোর পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। তাদের হাতে নগদ টাকা থাকায় তারা নিজেরাই একটি ইজিবাইক ক্রয় করে প্রশিক্ষণ বিহীন সড়কে ইজিবাইক নিয়ে নেমে যায়। এতে অদক্ষ ড্রাইভারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলশ্রæতিতে সড়কের দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইজিবাইক চালাতে কোন ধরনের লাইসেন্স লাগে না আবার ইজিবাইকের কোন নাম্বার লাগে না। তাই সহজেই যে কেউ ইজিবাইক কিনতে পারে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালাতে পারে। এতেই অনেক অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলেরা পরিবারের চাহিদা মেটাতে সহজেই এই ড্রাইভিং পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলে। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে একটু নজরদারী বৃদ্ধি করলে শিশু চালকের সংখ্যা এবং অদক্ষ চালকের সংখ্যা কমে যাবে এবং সড়কে দুর্ঘটনার হারও কমে যাবে। বিশেষ করে ভরাসার বাজার, বুড়িচং বাজার, বারেশ্বর চৌমুহনি, শংকুচাইল বাজার, কালিকাপুর বাজার, ফকির বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া সদর বাজার, বড়ধুশিয়া, চান্দলা, সাবের বাজার, কংশনগর, দেবপুর, ভারেল্লা মাজার এলাকা, নিমসার ফাঁড়ি রোডে ইজিবাইকের কারণে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।