চেইন অব কমান্ড মেনে বিজিবিকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

Spread the love

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি।’ শৃঙ্খলার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে চেইন অব কমান্ড মেনে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানী ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবসের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন, অভিবাদন গ্রহণ এবং বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি সদস্যদের পদক প্রদান করেন। আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবিকে একটি দক্ষ, শক্তিশালী আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
তিনি বলেন, পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার বিজিবি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন র্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা প্রদান, জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবীর সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চ ধাপে উন্নীতকরণ, অগ্রিম বেতনসহ বার্ষিক ২ মাসের ছুটি প্রদান, পারিবারিক রেশন ও ৩ বছরের নিচে সন্তানদের পূর্ণ স্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের আগ পর্যন্ত নগদমূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। দুর্গম প্রত্যন্ত ও পার্বত্য অঞ্চলের জনবিচ্ছিন্ন ৫০টি বিওপিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তি স্থাপন করে আইপি টেলিফোনের মাধ্যমে বিওপি থেকে বিজিবি সদর দপ্তর ও অন্যান্য স্থানে যোগাযোগসহ বিজিবি সদস্যরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে।
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানামরের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকায় সশস্ত্র সংঘাত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সংঘাতের ফলে বিজিবির সদস্যরাও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তবুও বিজিবি সদস্যরা একটি বুলেটও ফায়ার না করে অত্যন্ত ধৈর্য ও পেশাদারত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। সহনশীলতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় তিনি বিজিবিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবির মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ বিশেষ করে নারী সৈনিকদের ড্রিল দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি বিজিবিতে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান।
ভাষণ প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘প্রেরণা’র উদ্বোধন করেন।
এরপর ডগ মার্চ, ট্রিক ড্রিল, বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা এবং বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সম্মিলিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • বাংলাদেশ