‘বুড়িচং সরকারী মৎস্য হ্যাচারী যেন ভূতুরে বাড়ী’ “কাগজে কলমে চলে পোনা উৎপাদন ও বিক্রয়ের কার্যক্রম”

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ minutes ago

Spread the love

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মৎস্যচাষীদের পোনা সরবরাহের জন্য ৩.৩৩ হেক্টর জমি নিয়ে সরকারী ভাবে মৎস্য হ্যাচারী স্থাপন করা হয়। যার মধ্যে পুকুর রয়েছে ৮ টি এবং পোনা উৎপাদনের জমি রয়েছে ১.০৪ হেক্টর। কিন্ত সরকারী সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকলেও এখানে কখনো পোনা উৎপাদন করা হয় না। শুধুমাত্র কাগজে কলমে পোনা উৎপাদন ও বিক্রয় দেখানো হয়। প্রয়োজন হলে অন্য কোথাও পোনা মাছ ক্রয় করে বিতরণ করা হয়ে থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খামার ব্যবস্থাপক শামছি আরা ফেরদৌসী আসার পর থেকে খামারটি যেন নির্জিব হয়ে গেছে। তিনি দৃশ্যমান কোন কাজ করেন না। ৮টি পুকুর ও পোনা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সরঞ্জামাদি থাকার পরেও এখানে কোন পোনা উৎপাদন করতে দেখা যায় নাই। মাঝে মধ্যে কোন দিবসে পোনা বিতরণ কিংবা মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে উম্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করণের জন্য অন্যখান থেকে পোনা ক্রয় করে বিতরণ করে এবং জলাশয়ে অবমুক্ত করা হয়। তাছাড়া বিগত সরকারের কিছু অসাধু ব্যাক্তির সাথে যোগসাজসে বিভিন্ন অনিয়ম করেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খামার ব্যাবস্থাপকের কার্যালয়টি যেন কারো বেড রুম। একপাশে কাথা বালিশ বিছানো রয়েছে অন্যপাশে চেয়ার টেবিল সাজানো রয়েছে। পোনা উৎপাদনের হাউজে গিয়ে দেখা যায়, রান্না করার সরঞ্জামাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই হাউজে কখনো পোনা কিংবা রেনু উৎপাদন করা হয়েছে বলে দৃশ্যমান হয় না। খামার সূত্রে জানা যায়,২০২২—২০২৩ অর্থ বছরের পোনা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লক্ষ ৯০ হাজার পোনা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২লক্ষ ৯০ হাজার পিচ পোনা উৎপাদন করা হয়েছে এবং তা বিক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া রেনুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ কেজি। তা উৎপাদন করে বিক্রয় করা হয়েছে। যা বিক্রয় করে ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা জমা করা হয়েছে। ২০২৩—২০২৪ অর্থ বছরের পোনা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লক্ষ ৯৩ হাজার পোনা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২লক্ষ ৯৩ হাজার পিচ পোনা উৎপাদন করা হয়েছে এবং তা বিক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া রেনুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ কেজি। তা উৎপাদন করে বিক্রয় করা হয়েছে। যা বিক্রয় করে ৪ লক্ষ ২ হাজার ১০০ টাকা জমা করা হয়েছে। ২০২৪—২০২৫ অর্থ বছরের পোনা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬৪.৬০ কেজি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৮৬৪.৬০ উৎপাদন করা হয়েছে এবং তা বিক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া রেনুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩কেজি। তা উৎপাদন করে বিক্রয় করা হয়েছে। যা বিক্রয় করে ৪ লক্ষ ৬ হাজার ৩০০ টাকা জমা করা হয়েছে। খামার ব্যাবস্থাপকের কার্যালয়টি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করায় এবং নতুন কোন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় গার্ডসেটের মধ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। স্থানীয় আরিফুল ইসলাম মাহাদী জানায়, এখানে কোন পোনা উৎপাদন করা হয় না। বছর বছর শুধু কাগজে কলমে উৎপাদন ও বিক্রয় দেখানো হয়। আর মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে পোনা অবমুক্ত করার জন্য কোন চাষীদে পোনা কিনে আনে। আমি আমার পুকুরের জন্য কিছু পোনা নিয়েছিলাম। এগুলোর মধ্যে কোন কোনটি আধা কেজি এবং কোনটি ১ কেজি পর্যন্ত ছিল। এই মাছগুলো আমার পুকুরে ছাড়ার পর পুকুরের বাকি মাছগুলো মারা গিয়েছে। এইগুলো তাদের খামারের ছিল না, অন্য কোন জায়গা থেকে ক্রয় করে আমাকে দিয়েছিল। সরকারী মৎস্য হ্যাচারীটি দীর্ঘদিনই বন্ধ রয়েছে। যা শুধু মাত্র কাগজে কলমে দেখতে পাওয়া যায়। খামার ব্যবস্থাপক শামছি আরা ফেরদৌসী বলেন, বিগত দুই অর্থ বছর আমার এখানে জনবল ছিল না। তাই আমি অন্য উপজেলা থেকে জনবল এনে রেনু ও পোনা উৎপাদন করেছি। এখন আমার জনবল রয়েছে রেনু ও পোনা উৎপাদনে কোন সমস্যা নেই। এখানে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রেনু ও পোনা উৎপাদন করে বিক্রয় করছি। তাছাড়া কার্যালয়টি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করায় গার্ডদের সেডের মধ্যেই অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এখানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি। চেষ্টা করছি বদলী হয়ে আমার নিজ এলাকা ময়মনসিংহে চলে যেতে।

  • বুড়িচং