দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) নির্বাচনী এলাকায় নতুন-পুরাতন প্রার্থীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় অনেক চেনা-অচেনা মুখের আর্বিভাব ঘটে এ আসনে। প্রতিদিনই কোন না কোন নতুন মুখের দেখা পেয়েছে ভোটাররা। মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ধারণা ছিল ক্ষমতাশীন দলের মনোনয়ন পেলেই বিজয় লাভ করা সুনিশ্চিত হবে। তাই ২৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেছিল। এছাড়া অন্যান্য ছোট দলগুলো থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেছে। সরকার দলের নীতি নির্ধারকরা ২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাসেম খানের উপর আস্থা বিশ্বাস রেখে তাকেই নৌকার মাঝি হিসেবে এই আসনের হাল ধরার দায়িত্ব প্রদান করে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করেন। ফলশ্রæতিতে দীর্ঘ দিন মাঠে থাকা আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেন। আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর খান চৌধূরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভুঁইয়া রুমি। জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনকে মনোনীত করা। এই দুঃখ নিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ তাজুল ইসলাম জাতীয় পার্টির সকল পদ পদবী থেকে পদত্যাগ করেছেন। জাসদের কুমিল্লা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও বুড়িচং উপজেলা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উদ্দিন দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় করলেও জমা প্রদান করেন নাই। কিন্ত কি কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেন নাই, তা জানা যায়নি। গণফোরামের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা করেন গণফোরামের কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলীমূল এহছান রাসেল। জাকের পাটির মোঃ সাইফুল ইসলাম, সুপ্রিম পার্টির পীরজাদা বাকিবিল্লাহ আযহারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহ আলম এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা প্রদান করেন। গত ৩ ডিসেম্বর জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই বাছাইয়ে ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল বলে ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নি কর্মকর্তা খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট ৩ জন প্রার্থী থাকায় ঐ দিন থেকে কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের মাঠ শীতল হয়ে যায়। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন নৌকার প্রার্থী এডভোকেট আবুল হাসেম খান ঘরে বসেই উপ-নির্বাচনের মতো বিজয় লাভ করবেন। যদিও বিএনপির থেকে ছেড়ে আসা আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী শওকত মাহমুদের প্রার্থীতা যাচাই বাছাইয়ে টিকে যায়। তারপরেও ক্ষমতাশীন দলের নৌকার প্রার্থীর কাছে পাত্তা পাবেনা বলে অনেকেই ধারণা করেছিল। তাদের ধারণা ছিল শওকত মাহমুদ বিএনপি থেকে ছেড়ে এসেছেন। বর্তমানে বিএনপি এক দফা দাবী আদায়ের জন্য রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাই শওকত মাহমুদের পক্ষে বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা থাকবে না। তাই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং অন্যান্য ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের ভয়-ভীতি প্রর্দশন করে নির্বাচনের মাঠ আওয়ামীলীগের দখলে নিয়ে যাবে। জাকের পাটির প্রার্থী সাইফুল ইসলামকে কেউ চিনে না। ইতিপূর্বে তাকে কেউ কোথাও দেখে নাই। তাই সাইফুল ইসলামের কোন নেতা কর্মীদেরকে গনসংযোগ কিংবা কুশল বিনিময় করতে দেখা যায় না। অপর দিকে সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী পীরজাদা বাকিবিল্লাহ আযহারী দরবার শরীফের কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্থ থাকায় কিছু ভক্তবৃন্দ নিয়ে মাহফিলে মাহফিলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামীলীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশামুল হাসান ভুইয়া রুমি মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও তিনি বুড়িচং উপজেলার একটি অংশ নিয়ে থাকায় তারও তেমন প্রভাব পড়বে না । তা ছাড়া তার তেমন কোন নেতা কর্মী নেই বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলায়। হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে ভোটের ইমেজ হারিয়ে গিয়েছিল। ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করতে দেখা গেছে। তাদের ধারণা ছিল হয়তো এই বছরও দলীয় নেতা-কর্মীরাই ভোট প্রদান করবেন। ভোটারদের প্রয়োজন হবে না। মাঠে ময়দানে ঘুরেও দেখা গেছে নৌকার নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গা বৈঠক করে কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন করছে। কিন্ত অন্যান্য প্রার্থীদের তেমন একটা দেখা যায়নি। কিন্ত গত ১০ ডিসেম্বর আপিলের মাধ্যমে দুই স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন ও আবু জাহের এবং ১১ ডিসেম্বর গণফোরামের প্রার্থী এডভোকেট আলীমূল এহছান রাসেল এবং ১২ ডিসেম্বর আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী প্রার্থীতা ফেরত পাওয়ায় বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া নির্বাচনী এলাকা যেন নতুন ভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নেতা-কর্মীদের সাথে সাথে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করতে দেখা গেছে। গত ৩ ডিসেম্বরের পর থেকে কুমিল্লা-৫ আসনের ভোটার ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন উৎসাহ উদ্দিপণা দেখা যায়নি। স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থীরা আপিল শুনানীর মাধ্যমে প্রার্থীতা ফেরত পাওয়ার পর নির্বাচনের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আর খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকরা। এই আসন থেকে যেই এমপি নির্বাচিত হয়-তাকে অনেক যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে নিতে হবে। যুদ্ধ ছাড়া ঘরে বসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমপি হওয়া সম্ভব নয়। তাই সকল দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে মাঠে ময়দানে। যে ভাবে পারছে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করছে এবং তাদের পক্ষে কথা বলার ও ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রæতি নেওয়ার চেষ্টা করছে। সচেতন মহল মনে করেন-এই বারের নির্বাচন সিংহ ও বাঘে-মহিষে লড়াই হবে।