বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার হাট-বাজারগুলোতে অবাধে চলছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

Spread the love

আমরা বুঝতে শেখার পর থেকেই পলিথিন শব্দটার সাথে পরিচিত হয়ে এসেছি। অবাধে এর ব্যবহার দেখছি। পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর জেনেও আমরা প্রতিদিন তা ব্যবহার করছি । কোন না কোন পন্য দ্রব্য ক্রয় করার সাথে সাথেই পলিথিন হাতে চলে আসে। ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউ এর ক্ষতির দিকটি চিন্তা করে দেখি না। পলিথিন এমন একটি পদার্থ যা পচনশীল না। দীর্ঘদিন মাটির নিচে পড়ে থাকলেও যেমনটা তেমনই থাকে। তার কোন রকম পরিবর্তন হয় না। আমরা অনেক সময় পলিথিনকে পুড়িয়ে ফেলি। কিন্ত পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন করে বায়ু দূষণ করে। যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই এই পর্দার্থটির ব্যবহার সহজলভ্য হচ্ছে। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতের খাবারের কাজে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে গেছে। এক সময় আমাদের দেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হতো। পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। কিন্ত কালের বিবর্তনের ফলে পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং পাট চাষ যেন হারিয়ে গেছে। এক সময় প্রত্যেকটি পরিবারে কমপক্ষে একটি করে পাটের উৎপাদিত ব্যাগ থাকতো। যা দিয়ে মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যদ্রব্য হাট-বাজার থেকে ক্রয় করে আনার জন্য ব্যবহার করতো। কিন্ত এখন প্রত্যেকটি মানুষ পলিথিন ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। সকালের নাস্তা পরটা ও সবজি নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় পলিথিন। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে রোডম্যাপ অনুসারে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, পলিথিন বন্ধ করে পাটজাতপণ্য ব্যবহার বৃদ্ধি করতে আমরা পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা এবং সোনালী ব্যাগ নামে একটা পাটজাত ব্যাগ তৈরি করেছি। আমরা ডিসি সম্মেলনে ডিসিদেরও বলেছি। পবিত্র মাহে রমজানের কারণে আমরা এই মুহূর্তে বাজারে কোনো ধরনের খোঁচা দিতে চাইনি। আমরা বাজারকে অস্থিতিশীল করতে দিতে চাই না। সে কারণে আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডিসি সাহেবদের প্রস্তত থাকার কথা বলেছি। রমজানে যেসব ব্যবসায়ীরা বস্তা ব্যবহার করে তাদের এনে সভা এবং কাউন্সিলিং করার কথা বলা হয়েছে। রোজার পরে এ বিষয়ে আমরা ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নানক বলেন, আমরা আরেকটি কথা বলে রাখতে চাই। এরই মধ্যে পরিবেশমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সকল মন্ত্রী মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানবজীবন হরণকারী এই পলিথিন বন্ধে একটি যৌথ সভা করা হবে। সেই যৌথ সভায় আমরা একটি রোডম্যাপ করব। সেই রোডম্যাপ অনুসারে আমরা পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব। মন্ত্রী বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ এর আওতায় ১৯টি পণ্যে পাটের মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ আইনটি প্রয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি বছর পাট পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, পাটবীজের আমদানিনির্ভরতা হ্রাস করে পাটবীজ উৎপাদন পাটচাষিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা, পাটচাষের আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে পাটচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিমিত্ত পাট অধিদপ্তরের অধীন উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি দেশের ৪৫টি জেলার ২২৮টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। আশা করি, বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বর্নিভর হবে। প্রয়োজনীয় পাটবীজ সংগ্রহে আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না। পাট মৌসুমে হাট-বাজারে নজরদারি জোরদার এবং নিয়মবহির্ভূত মজুদ রোধে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে করে মিল মালিকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে পাট সংগ্রহ করতে পারছে, যা রফতানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে, চাষীরাও পাটের সঠিক মূল্য পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর মাধ্যমে পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন ও ব্যবহার সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করেছে। জেডিপিসির নিবন্ধিত উদ্যোক্তারা ২৮২ রকম দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছেন যার অধিকাংশই বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করতে প্রচার প্রচারণাসহ বিদেশে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এসব মেলা পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন বাজারে ভ্যানের মাধ্যমে আনারস, পেয়ারাসহ অন্যান্য ফল বিক্রয় থেকে সর্বক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যাবহার চলছে। বুড়িচংয়ের জরুইন গ্রামের ফল বিক্রেতা মফিজ মিয়া তার বিক্রিত ফল ক্রেতাদেরকে পলিথিনের মাধ্যমে প্রদান করেন। ক্রেতারাও এতে খুশি থাকে। ক্রেতারা কাগজের কাটুনে করে ফল নিতে চান না। ফল বিক্রেতা মফিজ মিয়া জানান, গ্রাহকরা কাগজের কার্টুনের চেয়ে পলিথিনটাকে বেশি পছন্দ করে। তাই পলিথিন ব্যবহার করছি। এতে কি ক্ষতি হয়? বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে। সবজি বাজার, মাংসের বাজার, মাছের বাজার, মুদি বাজার থেকে শুরু করে নিত্যদিনের প্রত্যেকটি পন্যদ্রব্যের ক্ষেত্রেই পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সচেতন মহল মনে করেন, পরিবেশ আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তদারকীর অভাবে দিনে দিনে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী পলিথিনের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন দ্রæতই বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় পরিবেশের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্ত বর্তমানে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের কোন উদ্যোগ নেই। নিরাপদ চিকিৎসা চাই কুমিল্লা জেলা কমিটির সভাপতি কবি ও সংগঠক আলী আশরাফ খান বলেন, বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খাদ্য গ্রহন করে। মানুষের নিত্যদিনের চাহিদা মেটাতে দিন রাত পরিশ্রম করে। যেই শরীরটা দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে সেই শরীরটা যদি ঠিক না থাকে তাহলে কিভাবে পরিশ্রম করবে। নিজের এবং পরিবারে চাহিদা মেটাবে। তাই পরিবেশ ও স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তারা যেন প্রত্যেকটি বাজারে মনিটরিং করে এবং নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মীর হোসেন মিঠু বলেন, পলিথিনে কোন প্রকার খাদ্য দ্রব্য না নেওয়াই ভালো। সর্বদাই পলিথিন বর্জন করে চলা উচিত। পলিথিনের মধ্যে খাবার বেশিক্ষণ রাখলে খাবারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এই খাবার খেলে ফুড পয়েজিংয়ের সম্ভাবনা থাকে। তাই আমাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম থেকে পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া