বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ার অভিভাবক হলেন আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

Spread the love

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দুই উপজেলার অভিভাবক নির্বাচিত হলেন সাবেক ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের। তিনি বড় ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে এসে জনগণের সাথেই মিশে গেলেন। জনগণ তার ভালোবাসার মূল্যায়ন করেছেন সর্বোচ্চ ভাবে। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাবেক দুই বারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর খান চৌধূরীকে পরাজিত করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই উপজেলার জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হন। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। কিন্ত আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড তাকে নৌকার প্রতীক প্রদান না করে বর্তমান এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাসেম খানকে নৌকার প্রতীক প্রদান করে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। এতে আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের থেমে যাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন এবং জেলা রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা প্রদান করেন। সেখানে বাঁধে বিপত্তি। এক শতাংশ ভোটারের তালিকায় ভুল আছে বলে জেলা রিটানিং অফিসার তার মনোয়নপত্র বাতিল করে দেন। শুরু হয়ে যায় প্রার্থীতা টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। নির্বাচন কমিশনের আপিল বিভাগ তার আবেদনের প্রেক্ষিতে অনেক যাচাই বাছাই করে প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করেন। প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার পর শুরু হয়ে যায় মাঠে ময়দানে অন্যান্য প্রার্থীদের সাথে প্রতিযোগীতা। এভাবে একের পর এক যুদ্ধ করে অবশেষে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনেন। তিনি ৪ হাজার ২৮৮ ভোট বেশি পেয়ে কেটলি প্রতিক নিয়ে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া ) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এই আসনের ১৪০টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী কেটলি প্রতীকে বিজয়ী আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবু জাহের পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৮১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ফুলকপি প্রতীকে ৬১ হাজার ৫২২ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়াও নৌকা প্রতীকে এডভোকেট আবুল হাসেম খান পেয়েছেন ২২ হাজার ৩১৫ ভোট, ঈগল প্রতীক নিয়ে সাংবাদিক শওকত মাহমুদ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৮০ ভোট, ট্রাক প্রতীকে এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমি পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৩ ভোট, লাঙ্গল প্রতীকে জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৩২০ ভোট, উদীয়মান সূর্য প্রতীকে এডভোকেট আলীমূল এহসান পেয়েছেন ৪১৯ ভোট, একতারা প্রতীকে মুহাম্মদ খাজা বাকী বিল্লাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৪২৭ ভোট এবং নৌকাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৭৩ ভোট । এ আসনে মোট ১ লাখ ৭২ হাজার ৭১৫ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ২ হাজার ৭৭৬ ভোট। বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৯। এ আসনে ভোট প্রয়োগের হার ৩৯.৫৩ শতাংশ । কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ আবু জাহের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয় লাভ করেন। তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক। শিক্ষা বিস্তারে গড়েছেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বড় ভাই আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের এর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বড় ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য তিনি উপনির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং বিজয় লাভ করেন। নির্বাচিত হবার পর থেকে উপজেলার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন। রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণসহ নানা কাজে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গড়ে তুলেছেন অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি সুনামের সাথে সাফল্যের সহিত পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়া মাধবপুর আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের ফাউন্ডেশন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন। তার কলেজে অসহায়, গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অধ্যায়ন করার সুযোগ দিয়েছেন। নিজের অর্থায়নে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের মাসিক সম্মানি নিজে না নিয়ে অসহায় গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর বাজারে আল্লাহর ৯৯ নাম সম্বলিত একটি গোলচত্তর নির্মাণ করেছেন। ব্রাহ্মণপাড়া সদরের যানজট নিরসনের জন্য একটি বাইপাস সড়ক করেছেন যা রশিদ মার্কেট হতে উপজেলা পরিষদ মডেল স্কুল পর্যন্ত রয়েছে। দিনের বেলায় বড় বড় ট্রাকের যানজট কমাতে দড়িয়ারপাড় ঈদগাহ ও মিরপুর সিএনজি অটোরিকশা স্ট্র্যান্ডে নিজস্ব অর্থায়নে চেকপোষ্ট স্থাপন করেছেন। এতে করে বাজারগুলোতে যানজট কমেছে। ব্রাহ্মণপাড়া থেকে হরিমঙ্গল বাজার পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে কংক্রিট দিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছেন। উপজেলার টাটেরা, টুকুই, হরিমঙ্গল, শিদলাই, মাধবপুর, চান্দলা, শশীদল, দুলালপুরসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কাঁচা রাস্তা মেরামতে ব্যাপক কাজ করেছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর পরই মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, চোরকারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমানে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে কুমিল্লা-৫(বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জনগণ যেহেতু তাকে ভোট দিয়ে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলার অভিভাবক নির্বাচিত করেছেন। তিনি দুই উপজেলার উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন। দুই উপজেলার জনগণ যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে তাকে ভোট দিয়েছেন তিনিও তাদের সেই আশা আকাঙ্খা পূরণ করার জন্য সমান ভাবে কাজ করে যাবেন, এটাই জনগনের প্রত্যাশা।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া