ব্রাহ্মণপাড়ায় আগাম সবজি চাষির স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

Spread the love

আগাম সবজিতে লাভের আশায় নানা ধরনের সবজি আবাদ করা সবজি চাষিরা বাড়ি তুলছেন তাদের শ্রমে অর্জিত স্বপ্ন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে মুনাফাও গুনছেন চাষিরা। এতে করে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষিপল্লীগুলোতে তৈরি হয়েছে সুখের আবহ। এসব সবজি সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমিতে এসেও এসব সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শীতকালীন এসব আগাম সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, লাউ, বেগুন, স্কোয়াশ এবং লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার এবং কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩১০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অবশ্য ইতিমধ্যেই ২১০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে আগাম জাতের সবজি চাষের ফলন এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের নানারকম পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা । সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন শীতকালীন সবজির মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেত থেকে সবজি তোলা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। কেউ ক্ষেত থেকে বিক্রয় উপযোগী টমেটো সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ ক্ষেত থেকে মুলা সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রমে অর্জিত স্বপ্নের ফুলকপি তুলছেন ও ক্ষেত থেকেই তা বিক্রি করছেন পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে। অনেক চাষি বেড়েওঠা সবজির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী-পুরুষের সমতায় মাঠে মাঠে যেন ফুটে উঠেছে আবহমান বাংলার চিরচেনা রূপ। চাষিরা জানান, আগাম সবজিতে এ বছর লাভবান কৃষক। মাঝেমধ্যে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার আগাম সবজি চাষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে অনেক চাষিরই। এতে করে আগামী বছর আগাম সবজি চাষে অনেক চাষি সবজি আবাদে মনোনিবেশ করবেন বলেও জানান তারা । মহালক্ষীপাড়া এলাকার সবজি চাষি সোহেল রানা জানান, তিনি ১৯ শতক জমিতে আগাম টমেটো চাষাবাদ করেছেন। শিম আবাদ করেছেন ১৪ শতক জমিতে। বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করেছেন ২১ শতক জমিতে। এছাড়াও প্রায় ৩৯ শতক জমিতে তিনি অন্যান্য সবজি চাষ করেছেন। এতে লাভের স্বপ্নও দেখছেন তিনি। তবে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় ও টানা বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। তার আবাদ করা সবজির মধ্যে টমেটো, শিম, লালশাক ও স্কোয়াশ বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি । উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া এলাকার সবজি চাষি মিজানুর রহমান জানান, এ বছর তিনি ২৩ শতক জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। এতে খুশিও তিনি। ১৫ শতক জমিতে আবাদ করেছেন মুলা। মুলার বীজ রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে বর্তমানে ফলন এসে বিক্রির উপযুক্ত হয়েছে। মুলার আবাদের মধ্যেই এখন আলু রোপণের প্রস্তুতিও নিয়েছেন তিনি। মুলা বিক্রি শেষ হলে এরপর থেকে তিনি বাজারে আগাম আলু বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশা করেন। উপজেলার মনোহরপুর এলাকার সবজি চাষি হারেছ মিয়া জানান, এ বছর তিনি সবমিলিয়ে ৪৩ শতক জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করেছেন। এরমধ্যে লাউ চাষ করেছেন ৯ শতক জমিতে। এ বছর লাউয়ের ফলন ভালো হওয়ায় তিনি লাভের মুখ দেখেছেন। এছাড়া তিনি ফুলকপি, শিম, টমেটো, লালশাক ও মুলা আবাদ করেছেন। এ বছর ফসলের ফলনে উৎফুল্ল তিনি । উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১০ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি অফিস সবজির পরিচর্যায় মাঠে মাঠে গিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করে আসছে। ব্রাহ্মণপাড়ায় আগাম সবজি চাষিরা নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি বাজারে তুলছে। এতে ভালো দামও পাচ্ছে তারা। ফলে আগাম সবজি চাষিরা লাভবান হচ্ছে। শীতকালীন সবজির চাষের বিষয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

  • ব্রাহ্মণপাড়া