ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে আবহাওয়া। এর ফলে এখন দিনে গরম, রাতে ও সকালে শীতের আমেজ। আবহাওয়ার এই তারতম্যে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সববয়সী মানুষ। প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে কেউ না কেউ ভুগছেন মৌসুমি রোগ ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি, গলাব্যথা বা ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায়।
গত শনিবার ( ১৬ নভেম্বর ) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসক, রোগী ও রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
চিকিৎসকরা জানান, এখন আবহাওয়ায় দুইটি ঋতুর উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছে। রাতে ও সকালে শীতের আমেজ আর দিনে গরম। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনজনিত কারণে মৌসুমি জ্বরসহ এ সময় শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়া, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে সাধারণ সর্দি-কাশি, ঠান্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত কয়েকদিনে সরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরকম সময়ে শিশু ও বৃদ্ধদের সুস্থ রাখার জন্য ধুলোবালি ও ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, নানা বয়েসী মানুষ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে কেউ এসেছেন জ্বর নিয়ে। কেউ এসেছেন জ্বর ও কাশি নিয়ে। কেউ কেউ এসেছেন ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে। গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা নিয়ে এসেছেন কেউ কেউ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা চার বছর বয়সী শিশু তামিমের মা মাহমুদা বেগম জানান, কয়েকদিন ধরে কাশি হচ্ছিল তামিমের। কাশির জন্য তিনি পল্লী চিকিৎসক থেকে কাশির সিরাপ ও মন্টিলুকাস জাতীয় ঔষধ খাইয়েছেন তাকে। তাতেও তার কাশি সারেনি। হঠাৎই তার তীব্র জ্বর আসে। এবার আর তিনি পল্লী চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন ছেলের চিকিৎসা করাতে।
উপজেলার গোপালনগর এলাকা থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগী বাবুল মিয়া ( ৫৫ ) বলেন, কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছি। জ্বরের সঙ্গে তীব্র কাশি গলাব্যথা ও মাথাব্যথাও আছে। প্যারাসিটামল খেলে জ্বর ছাড়ে, তবে কয়েকঘন্টা পর আবারও জ্বর আসে। কাশি কোনোমতেই কমছে না। ফার্মেসি থেকে ঔষধ খেয়ে কোনো উপকার পাইনি। এখন কিছুটা শ্বাসকষ্ট অনুভূত হচ্ছে। শরীরে খুব দুর্বলতা অনুভব করছি। তাই হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসক আমাকে হাসপাতালে ভর্তি দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগী দুই বছর বয়সী রাইকার মা ঝরনা আক্তার জানান, কয়েকদিন ধরে রাইকা জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। প্রাইভেট হাসপাতালের এক শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে ছিলেন তার মা। তাতেও সে সুস্থ হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে আসলে চিকিৎসক তাকে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু রাইকা।
শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে সাত মস বয়সী শিশু আলিফকে জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছেন স্বজনরা। চিকিৎসক শিশু আলিফের শারীরিক পরিস্থিতি দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসক জানান, আলিফ সিভিয়ার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, এখনো পরিপূর্ণ শীত পড়েনি। তবে শীত না পড়লেও সকাল-সন্ধ্যা ও রাতে শীত অনুভব হচ্ছে। এর ফলে এ সময়ে গরম ও শীতের সংমিশ্রণে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতাও এ সময়টাতে বেশি হয়। এছাড়াও এ সময়টায় সববয়সী মানুষই মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করছি।
মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, শিশু ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। দিন দিন শীত বাড়বে। শীতের সময়টায় বয়স্ক ও শিশুদের শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত গরম কাপড়সহ হাত-পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না। গোসলসহ সব ক্ষেত্রে সম্ভব হলে কুসুমগরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনার সময় মানুষ যতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছিল এখন আর কেউ তা মানছে না। তবে এ শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি উড়ছে। কদিন পর তীব্র কুয়াশা ও শীত পড়বে। এ জন্য শীতের এই সময়টাতে শীতকালীন নানা রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক ও ভারি কাপড় পরিধান করতে হবে। বাইরের খোলা খাবার পরিহার করতে হবে। এতে শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।