ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার মাছচাষি

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

Spread the love

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় ৩ হাজারের বেশি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। যার ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ২ হাজারের বেশি মাছচাষি। ক্ষতির ভারে মনোবল হারিয়ে এসব মাছচাষিরা হতাশায় দিন পার করছেন। জানা গেছে, উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে গোমতি এবং সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যার শিকার হয় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। প্রথমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়, পরে বাকি ৩টি ইউনিয়নও প্লাবিত হয়। এতে এ উপজেলার ছোট বড় মিলিয়ে ৩ হাজারের বেশি মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়। যার ফলে এ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ উপজেলার ২ হাজারের বেশি মাছচাষি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মাছচাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২ হাজারের বেশি মাছচাষি তাদের পুকুর বা ঘেরে চাষকৃত নানা প্রজাতির মাছ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও মাছচাষিরা অবকাঠামোগত ক্ষতির মুখেও পড়েছেন। প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের মনোবল ফেরাতে উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাঠপর্যায়ের কাজ করছে। উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার বাসিন্দা মো. আতিক। তিনি তাঁর ৬টি পুকুরে নানা প্রজাতির দেশি মাছ চাষ করেছিলেন। প্রতিটি পুকুর ছিল মাছেভরা। হঠাৎ আসা বন্যার জলে তার স্বপ্নও ভেসে গেছে। মো. আতিক বলেন, সর্বনাশা বন্যা আমাকে পথে বসিয়ে গেছে। আমার মাছভর্তি পুকুরগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পুকুরের সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, এর সাথে আমার স্বপ্নও। এতে আমার ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি পুকুরে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের দেশি প্রজাতির মাছ ছিল। বন্যার আগে পুকুরগুলোর সামনে এলে মাছের নড়াচড়ায় সুখে বুকটা ভরে উঠতো। আর এখন পুকুরগুলোর পাড়ে এলে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। তবু বারবার পুকুরগুলোর কাছেই ছুটে আসি। জানি না আমার এ ক্ষতি কীভাবে পোষাবো।’ কথা হয় আরেক মাছচাষি মো. ফারুক আহমেদের সঙ্গে। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ করে বন্যায় সব তলিয়ে যাবে কোনোদিন কল্পনাও করিনি। এ বন্যায় আমার পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ১০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ধারকর্জ ও ঋণ নিয়ে মাছচাষ করেছিলাম। এখনো মাছের খাবারের দোকানদার টাকা পাওনা। সবাই টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। সবমিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জানি না এ হতাশা থেকে কীভাবে বের হয়ে আসতে পারবো।’ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক বলেন, বন্যায় এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩ হাজার পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এ উপজেলার ২ হাজার মাছচাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বন্যার পানির স্রোতে অনেক খামারের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে এ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিরা এর সুফল পাবেন। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের মনোবল ফেরাতে মাঠপর্যায়ের কাজ করছি।

  • ব্রাহ্মণপাড়া