মোহাম্মদ হোসেন নামে একজন নির্মাণ ঠিকাদার ছোট ভাই মোহাম্মদ আকাশকে মালোমিয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে তুলে ফেরার পথে নিজেই পরপারের যাত্রী হয়ে গেছে। তাছাড়া অপর ৪জন মারা গিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বিলাসবহুল একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে ৫ যাত্রী নিহত ও ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার সকালে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিলাক্স পরিবহনের যাত্রীবাহী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বাস উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের বসন্তপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার এসআই নজরুল ইসলাম। নিহতদের মধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও অপর দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতরা হলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মতিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩০), চট্টগ্রামের বাশখালীর বাহারছড়া গ্রামের নুরুল আবছারের ছেলে বদরুল হাসান রিয়াদ (২৬) ও নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে নাসির উদ্দিন পলাশ (৪০)। বাসের হেলপার লক্ষিপুর থানার পশ্চিম লক্ষিপুর গ্রামের লালমিয়ার ছেলে আবু তাহের খোকন(৪৮) এবং বাসের সুপার ভাইজার ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার চন্ডিমুড়া গ্রামের সুলতান মিযার ছেলে মাসুদ (২১)। এ ঘটনায় আহতরা হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মতিউর রহমানের ছেলে ফিরোজ (৪০), একই এলাকার আলী আহমেদের ছেলে মোক্তার হোসেন (৪০), ফজলুর রহমান (৪২), আরাফাত (৩৪), সিয়াম (৩২), সোহাগ (২৮), কামরুন নাহার (২৫), স্বপন শিকদার (২৫), রফিকুল ইসলাম (৩০), মনির (৩০)। তারমধ্যে চারজন কে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে চৌদ্দগ্রামে নিহত ৫ প্রত্যক্ষদর্শী ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল সোয়া ছয়টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রিলাক্স পরিবহনের যাত্রীবাহী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নৈশ কোচটি (ব-১১-০২৫১) মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর নামক এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এসময় ডাবলটেকার বাসটির ভিতরে সকলে আটকে যায়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও অপর দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সায়েদাবাদের জনপদ থেকে উঠা বাসযাত্রী ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভাসিটির ছাত্র রাঙ্গামাটির আরজ হোসেন সুমন জানান, রাত সাড়ে বারোটায় বাসটি ছাড়ার কথা থাকলেও ২৮জন যাত্রী নিয়ে রাত ২টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। শুক্রবার ফজরের নামাজের পূর্বে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় একটি হোটেলে যাত্রা বিরতি করে বাসটি। যাত্রাবিরতির পূর্বে গাড়িটির গতি বেপরোয়া থাকায় একাধিকবার যাত্রীরা শোর চিৎকার করে। যাত্রা বিরতি শেষে গাড়িটি আবারো বেপরোয়া গতির কারণে চৌদ্দগ্রামের বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশর্^বতী খাদে পড়ে যায়। এসময় বাসের অধিকাংশ যাত্রী ঘুমে ছিল। বেপরোয়া গতির কারণেই বাসটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। অপর বাস যাত্রী চট্টগ্রামের আজান হোসেন জানান, গাড়িটি উল্টে যাওয়ার পর তিনিসহ আরও কয়েকজন মিলে গাড়িটির সামনের গøাস ভেঙ্গে আহতদের উদ্ধারে চেষ্টা করি। দুর্ঘটনার কাছাকাছি ঘরবাড়ি নাথাকায় খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনের আসতে দেরী হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা আহত অপর যাত্রী চট্টগ্রামের হাটহাজারির নাবিল হোসেন জানান, গাড়ির গøাস ভেঙ্গে আটকে পড়াদের বের হতে সহায়তা করি। আহতদের কয়েকজনকে টেনে বের করি। নিহত মোহাম্মদ হোসেনের বড় ভাই আহত ফিরোজ হোসেন বলেন, ছয় ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন তৃতীয়। সে পেশায় একজন নির্মাণ ঠিকাদার। তাদের ছোটভাই মোহাম্মদ আকাশকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে তুলেদিয়ে দিয়ে এক আত্মীয়সহ আমরা অপর দুই ভাই বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় ছোট ভাই মোহাম্মদ হোসেন কে হারালাম। অপরদিকে নিহত অপরযাত্রী নোয়াখালী চাটখিল উপজেলার শাহাপুর গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে নাছির উদ্দিন পলাশের ভগ্নিপতি আফতাব উদ্দিন তুহিন মোবাইলে জানান, নাসির উদ্দিন পাইপ পিটারের কাজ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাসযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের শ^শুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন। হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রবিউল হাসান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১০ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৪ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন বলে তিনি জানান। মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম লোকমান হোসাইন বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী রিলাক্স পরিবহনের ডাবল ডেকার বাসটি সকালে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পাশ^বর্তী খাদে পড়ে যায়। এ সময় ৫ ব্যক্তি নিহত ও বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিহত ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সাব ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তা গাড়িটির ভিতর থেকে নিহত পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের আরো লোকজনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস গাড়িতে করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।