প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে কুমিল্লা-৫ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনে উৎসবমুখর পরিবেশে জমে উঠেছে নির্বাচনের কার্যক্রম। প্রার্থীরা তাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে দিন রাত ভোটারদের কাছে দোয়া ও ভোট চাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় মাইকিং। বিভিন্ন গানের সুরে সুরে পছন্দের প্রার্থীদের প্রচরণায় কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মী সমর্থকরা। ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে সকলেই সরব রয়েছে। জনগণের মধ্যে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ঘরে অন্ধরমহল পর্যন্ত একই আলোচনা। প্রত্যেক প্রার্থীদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন ভোটাররা। প্রার্থীরাও থেমে নেই- ভোটারদেরকে বিভিন্ন প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। দিন রাত নির্ঘূম ভাবে প্রচারণ প্রচারণায় ব্যস্থ রয়েছেন বিভিন্ন প্রার্থীরা। অফিস উদ্বোধন, উঠান বৈঠক, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কাজের মধ্যে কুমিল্লা-৫ আসনের ভোটারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেক বছর পর ভোটাররা তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে পেয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন। এই বছর প্রার্থী বেশি হওয়ায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে থাকায় ভোটারদের ও নেতা কর্মীদের কদর কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। মাঠে আলোচনা পর্যালোচনায় দেখা যায় এই বছরের নির্বাচন ত্রিমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈগলের ছোবলের মুখে পড়তে পারে অন্যান্য প্রার্থীরা। প্রথম পর্যায়ে শওকত মাহমুদের পক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তত একটা দেখা না গেলেও বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা শওকত মাহমুদকে তাদের আশ্রয়স্থল মনে করে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রথম পর্যায়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের তার সাথে দেখা যায় নাই। কিন্ত দিন যত অতিক্রম হচ্ছে ততই নেতা কর্মীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপর দিকে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাঘের মতো হুংকার দিয়ে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিদিনই নেতা কর্মীদের নিয়ে মিটিং মিছিল ও সভা-সমাবেশ করে কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের অনেকেই মনে করেন এই বছর সাজ্জাদ হোসেনের এমপি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই বছর সুযোগ হাতছাড়া হলে আর কোন দিনই সাজ্জাদ হোসেনের সুযোগ আসবে না। নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ জাহের এর প্রচার প্রচারণাও কোন অংশে কম নেই। দুই উপজেলার প্রত্যেকটি অঞ্চলেই রয়েছে তার নেতা কর্মীদের পদচারণা। তাকে নিয়েও স্বপ্ন বুনছেন অনেক নেতা কর্মীরা। ব্যবসায়ী সফল এম এ জাহের নির্বাচনী মাঠে কতটা সফল হতে পারবেন তা দেখার জন্য ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে দুই উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এম এ জাহের। প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই বারের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর খান চৌধূরী মাঠে থাকলেও প্রচার প্রচারণায় তেমন একটা সক্রিয়তা দেখা যায় না। তবে ভোটের মাঠে তিনি একটা বিশাল ফ্যাক্টর বলে মনে করেন অনেকেই। তবে তিনি নির্বাচন ছাড়বেন না বলে ইতিমধ্যে সকল নেতা কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন। বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাসেম খান অসুস্থ থাকায় মাঠে ময়দানে তাকে দেখতে পাওয়া যায় না। তার পক্ষে তার ব্যারিষ্টার মেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন। ব্রাহ্মণপাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তেমন সাড়া দিচ্ছেন না বলে নৌকার পাল উড়তে অনেক বেগ পেতে হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদ,এম এ জাহের ও শওকত মাহমুদের কাছে এ বছর নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে কঠিন হবে বলে অনেকেই মনে করেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইটা ঈগলের সাথে ফুল কপি কিংবা কেতলীর হতে পারে বলে স্থানীয় ভোটারদের অভিমত রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতাশেমুল হাসান রুমি তরুণ প্রজন্ম নিয়ে অগ্রসর হলেও কতটুকু সফল হবেন তা বলা যাচ্ছে না। তৃণমূল পর্যন্ত তার কার্যক্রমের ছোঁয়া এখনো লাগতে পারে নাই। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করে সময় অতিবাহিত করলেও ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন সাড়া জাগাতে পারছেন না। তবে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া গনফোরামের প্রার্থী এডভোকেট আলীমূল এহছান রাসেল ও সুপ্রিম পার্টির মুফতি বাকিবিল্লাহ নিজ নিজ গন্ডির মধ্যে থেকেই প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছেন। বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রত্যেকটি হাট-বাজার পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় চলছে নির্বাচনের আমেজ। দোকান পাটে চায়ের কাপের চুমুকে চুমুকে চলছে নির্বাচনের আলোচনা। প্রত্যেকটি ভোটার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর গুণগান করছেন। মাঠে প্রশাসন আছেন কঠোর অবস্থানে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।