কুমিল্লার দেবিদ্বারে গত ছয়দিনে চারটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যার শিকার হয়েছেন দুইজন ব্যবসায়ী, একজন হাসপাতালের আয়া ও একজন চা দোকানের কর্মচারী। এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে পুলিশের দাবি এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে দুইজন স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। জানা গেছে, গত সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আবু সায়েম (৩৯) নামে এক ব্যবসায়ীকে পাওনা টাকার জন্য অপহরণ করে গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ৭-৮ জন। পরে তাকে সারাদিন আটক রেখে রাতে উপজেলার বাঙ্গুরি গ্রামে নিয়ে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদি মো. আবু কাউছার সরকার। এ ঘটনায় মামলার অভিযুক্ত মামুনের বাবা সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে মামুনসহ অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে জানায় পুলিশ। অপর ঘটনায় জানা যায়, দুই পরিবারের বাচ্চাদের ঝগড়ার মিমাংসা করতে গিয়ে গত শুক্রবার (১২ এগ্রিল) রাত ১১টার দিকে গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের উজানীকান্দি গ্রামে একটি সালিশ বৈঠকে শামীম আহাম্মদ (৪১) নামে এক ব্যবসায়ীকে কাঠের চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সালিশদার আবদুল আলিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। নিহত শামীম আহাম্মদ উজানিকান্দি গ্রামের মৃত আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে। তিনি গত ৬ মাস আগে ওমান থেকে দেশে ফিরে বাড়ির পাশে একটি চা দোকান দিয়ে ব্যবসা করছিলেন। একই দিনে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে পিটিয়ে শাহনাজ আক্তার মীম (৪৫) নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আয়াকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। দিবাগত রাত ৩টার দিকে পৌরসভার মা-মনি জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসপাতালের মালিক মোঃ তাজুল ইসলাম সরকার ও কর্মচারী মো. হোসেন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে কারা এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এখনও কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। নিহত শাহনাজ আক্তার পৌরসভার ভোষনা গ্রামের নেহাল কাজী বাড়ির মৃত মো. সেকান্দার আলীর মেয়ে। সর্বশেষ গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বরকামতা ইউনিয়নের বাগুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি বস্তির ঘর থেকে মো. আবুল হাসেম (৫০) নামে এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আবুল হাসেম বাগুর ছৈনুদ্দি হাজী বাড়ির মৃত আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে। তিনি চান্দিনা বাজারের একটি চা দোকানের কর্মচারী ছিলেন। গত ১২ এপ্রিল শুক্রবার রাত ১০টা থেকে পরদিন শনিবার দিবাগত রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ না পেয়ে ঘরের সামনে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে সুক্কু মিয়া নামের এক ব্যক্তি স্থানীয়দের নিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। রাত ৩টায় পুলিশ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.নয়ন মিয়া বলেন, চারটি হত্যাকান্ডের মধ্যে দুটি হৃদরোগ (স্ট্রোক) জনিত কারণ হতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। থানায় চারটি পৃথক মামলা হয়েছে। একটি মামলায় একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি মামলার তদন্ত চলছে।