“বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় রয়েছে কলা’র ব্যাপক চাহিদা” সড়কের পাশে ভ্যানে করে কলা বিক্রয় করছে অনেকেই

লেখক: Sohel Islam
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কলা অতি জনপ্রিয় একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে, পুরুষ-মহিলা সকলেই কলা পছন্দ করে। এই ফল প্রায় সারা বছরই হাট-বাজারে পাওয়া যায়।কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ.বি.সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং পর্যাপ্ত খাদ্যশক্তি। ধনী ও গরিব সকলেই সহজে কলা খেতে পারে। উৎপাদন ,স্বাদ ও সুগন্ধের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে ফলের রানী বলা হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশ,আসাম ও ইন্দো চীন কলার উৎপত্তিস্থল।এক সময় আমাদের দেশের প্রায় সব বাড়িতে কম-বেশি কলা গাছ দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় এবং বিদেশী কাঠের গাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কলা গাছগুলো অত্র অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছে। তবু অনেক কৃষক বর্তমানে কলার বাগান করছে এবং অনেক লাভবান হচ্ছে। তবে বিভিন্ন কারণে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় কলার চাষ তেমন একটা না হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে কলা চাষ হয়। বিশেষ করে নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলায় সবচেয়ে বেশি কলা উৎপাদন হয়। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় কলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কলা আনা হয়। তারপর নিজেদের গোড়াউনে রেখে খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করে। বিশেষ করে ভ্যানের মাধ্যমে কলা বিক্রয়কারীদের নিকট বিক্রয় করে। ভ্যানে করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামের পাড়া-মহল্লায় বিক্রয় করে থাকে। বুড়িচং বাজারের এম এ গণি সড়ক ও অফিস সড়ক এবং ব্রাহ্মণপাড়া সদর বাজারের সিএনজি স্টেশনের নিকট অনেক ভ্রাম্যমান কলা বিক্রেতাকে দেখতে পাওয়া যায়। তারা ১২ মাসই ভ্যানের মাধ্যমে কলা বিক্রয় করে থাকে। তবে সড়কের পাশে কলা বিক্রয় করতে গিয়ে অনেক গাল মন্দ শুনতে হয়। বড় বড় দোকানীরা তাদের দোকানের সামনে দাঁড়াতে দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে এই দোকানের সামনে কিছুক্ষণ বিক্রয় করে আবার অন্য দোকানের সামনে চলে যেতে হয়। এক ধরনের জাযাবরের মতোই তাদের ব্যবসায়ীক জীবন। বাজারের ইজারাদাররা প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ টাকা খাজনা হিসেবে আদায় করলেও তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা বরাদ্ধ নেই। ভাসমান ব্যবসায়ী হিসেবে বাজারের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্যান নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ফিরে বিক্রয়ের কাজ করা যেন তাদের রুটিং ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। রোদ বৃষ্টি ঝড় সব কিছুই তাদের মাথার উপর দিয়ে বয়ে যায়। তবু জিবন-জীবিকার তাগিদে সংসারের মায়ায় সকল দুঃখ কষ্টকে হাসিমুখে বরণ করে সকাল-সন্ধ্যান ভ্যান গাড়ীর হাতল ধরেই বসে থাকতে হচ্ছে। বুড়িচং উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ণমতি গ্রামের বিল্লাল হোসেনের সাথে এই প্রতিবেদকের আলাপ আলোচনা হয়। তিনি বুড়িচং বাজারের এম.এ.গণি সড়কে প্রায় ১২ বছর ধরে ভ্যানের মাধ্যমে কলা বিক্রয়ের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী একত্রিত হয়ে কলা ক্রয় করে আনেন। এই কলা বিক্রয় করে ২ছেলে ১ মেয়ে এবং স্ত্রীসহ ৫জনের সংসারের সকল খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের তেমন একটি পূঁজি নেই-বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। এই ব্যবসার উপর ভর করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং ২ ছেলেকে কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছেন। বিল্লাল হোসেনের অনেক ইচ্ছা ছেলেরা লেখা পড়া করে যেন ভালো একটি চাকুরী করতে পারে। এছাড়া তার আর কোন ইচ্ছা নেই। তার সকল পরিশ্রম ছেলেদের জন্য-তাদেরকে মানুষ করার জন্যই রোদ বৃষ্টিতে ভিজে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ভ্যানের মাধ্যমে বাজারে কলা বিক্রয় করতে গিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হলেও আল্লাহর রহমতে তিনি অনেক ভালো আছেন। ছেলে-মেয়েসহ সংসারের সকল খরচ বহন করার পরেও সামান্য কিছু সঞ্চয় করতে পারেন বলে তিনি জানান।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া