ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের জন্য বিদ্যালয়ে হামলা ভাংচুর ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

Spread the love

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে হামলা ও ভাংচুর এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মনোহরপুর অলুয়া চন্ডিপুর রেজাউল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিসহ নানা অভিযোগে এনে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোকজন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষ থেকে বের করে দেয়। এসময় বিদ্যালয়ের ল্যাব অপারেটর ফখরুল ইসলাম ও কয়েকজ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এছাড়া আবু সুফিয়ান নামে বিএসসি শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে আন্দোলনকারীরা। এতে বহিরাগত ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হট্টগোল তৈরি হয়। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফারহানা পৃথা ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণীর কার্যক্রম চলাকালে কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বহিরাগত কিছু লোকজন আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষে হামলা চালায়। এসময় আমাদের ল্যাব সহকারী ফখরুল ইসলাম স্যারকে মারধর করে আহত করে এবং তারা জোর করে ঘন্টা বাজিয়ে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেন। এসময় বিদ্যালয় থেকে আমরা যেতে না চাইলে আন্দোলনকারীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, আমরা মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসলে আমাদের বিএসসি শিক্ষক আবু সুফিয়ানকে হামলাকারীরা লাঞ্ছিত করে এবং সকল ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলে। সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করে স্থানীয় কিছু লোকজন বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা দপ্তরির কাছ থেকে জোর করে ঘন্টা বাজিয়ে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেন। এছাড়া আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তারা। আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শ্রেণীকক্ষে দরজা বন্ধ করে আশ্রয় নেই। এতেও আমাদের রক্ষা হয় নাই। তারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে মারধর করে। এসময় আমাদের ল্যাব সহকারী ফখরুল ইসলাম ও দশম শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্র ও ছাত্রীকে আহত করে হামলাকারীরা। আন্দোলনকরীদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম নোমান ও মো. জাহিদ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশিদ তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা বেগমের নিয়োগটি সম্পন্ন অবৈধ। এছাড়া তিনি তাঁর মনগড়া মতো বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। তারা বলেন, প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনসহ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেওয়া অভিযোগের আশানুরূপ কোন সমাধান পাইনি। আরিফুল ইসলাম নোমান ও মো. জাহিদ বলেন, আমরা মনোহরপুর অলুয়া চন্ডিপুর রেজাউল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অবৈধভাবে নিয়োগ প্রপাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চাই। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে এই বিদ্যালয় ত্যাগ করতে হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফারহানা পৃথা বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এসময় আন্দোলনকারীদেরকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে স্থানীয় কিছু লোকজন দশটি অভিযোগ এনে পূর্বে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে তারমধ্য পাঁচটি প্রমাণিত এবং প্রমাণিত অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অভিযোগকারীরা জেলা প্রশাসকের নিকট আবারও অভিযোগ দাখিল করেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও বলেন, তারা জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দেওয়ার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে না। আর এধরণের কর্মকান্ড প্রশাসন কখনোই সমর্থন করে না।

  • ব্রাহ্মণপাড়া