হিজাব নিয়ে কুটুক্তি করায় নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ ওএসডি

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

Spread the love

কুমিল্লার লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজকে ওএসডি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। গত সোমবার ১১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সরকারি কলেজ-২ শাখা এক প্রজ্ঞাপনে অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজকে ওএসডি করে। সোমবার (১১ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সরকারি কলেজ-২ শাখা এক প্রজ্ঞাপনে অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজকে ওএসডি করে। হিজাব নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে কুমিল্লার লাকসামের নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজকে অপসারণ দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে এ প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে ১৮ মার্চের মধ্যে এ কলেজ থেকে অবমুক্ত হয়ে বরিশাল মহিলা কলেজে সংযুক্ত হওয়ার জন্য তাকে আদেশ দেয়া হয়। অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলনে নামে। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ গেটে মানববন্ধন, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সর্বশেষ অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ২১ ফেব্রæয়ারি শহিদ মিনার ও মেলা উপভোগ করতে আসেন ওই কলেজের ডিগ্রি প্রথম বষেব্র শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আক্তার আঁখি ও তার ছোট বোন। ওই দিন কলেজে দুই বোন হিজাব-বোরকা পরিধান করে একসাথে নারী শিক্ষার্থীদের কমনরুমে যাওয়ার সময় কলেজ অধ্যক্ষ মেজর মিতা সফিনাজ তাদের বোরকা-হিজাব পরিধান নিয়ে নানা ধরনের কটুক্তি করেন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সামনে ছাত্রীদের বোরকা-হিজাব পরে আসায় অপমান করেন এবং বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের হিজাব নিয়ে টানাটানিসহ কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য করেন অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজ। নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওএসডি করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। কলেজের শিক্ষার্থী মাকসুদুর রহমান জিহাদী বলেন, অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজ হিজাব পরায় শুধু আঞ্জুমা আক্তার আঁখিকেই অপমান করেনি। ইতিপূর্বেও হিজাব পরায় তিনি অনেক ছাত্রীকে অপমান-অপদস্থ করেছেন। হিজাব নিয়ে টানাটানি করেছেন। বিশ্রী শব্দ দিয়ে গালাগাল করেছেন। কিন্তু কেউ শাড়ি কিংবা শর্ট পোশাক পরে আসলেও কাউকে কিছুই বলতেন না। অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজ মুসলিম হয়েও হিজাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমাদের হৃদয়ে আঘাত করেছেন। তিনি শিক্ষকতার নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছেন। অধ্যক্ষকে ওএসডি করায় কলেজে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরে আসবে। আমরা এতে খুশি। উল্লেখ্য, হিজাব নিয়ে কটুক্তি করায় নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজের অপসারণ দাবিতে (২৫ ফেব্রæয়ারি) কলেজ গেট ও ক্যাম্পাস এলাকায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে কলেজের শতশত শিক্ষার্থী অংশ নেন। মানববন্ধনে কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মিতা সফিনাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হিজাব নিয়ে কটুক্তি, বোরখা ধরে টানাটানি, হিজাব পরা ছাত্রীদের অপমান করাসহ নানা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আঞ্জুমা আক্তার আখি বলেন, ২১ ফেব্রæয়ারী শহীদ মিনার দেখাতে ও বইমেলা উপভোগ করতে ছোট বোনকে নিয়ে কলেজে আসি। সেখান থেকে নারী শিক্ষার্থীদের কমন রুমে যাওয়ার সময় অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজ আমাকে বোরখা পরিহিত দেখে রাগান্বিত স্বরে বলেন যে, তুমি এখানে কেন এসেছো? তখন আমার ও আমার ছোট বোনের পোশাক দেখে তিনি বিভিন্ন বাজে মন্তব্য শুরু করেন। ছোট বোনের গায়ে ছিল একটি ছোট কালো বোরকা এবং একটি ছোট কালো হিজাব আর আমার পরনে ছিল বোরকা, হাত পায়ের মোজা ও হিজাব। তিনি আমাদেরকে দেখিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠেন,‘ছোট বাচ্চাদের কি এগুলা কোন ধরনের পোশাক পরায় এই ধরনের পোশাক পরিয়ে বাচ্চাদের ভুলভাল জিনিস শেখায়’। ওই সময় তার সাথে থাকা কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে একজন প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেছিলেন বাচ্চাদেরকে হয়তো পরিবার থেকে ছোটবেলা থেকেই তারা পর্দা-নৈতিকতা শেখায়, কিন্তু প্রতিউত্তরে ম্যাডাম বলে ওঠেন এগুলা কোন ধরনের নৈতিকতা? এসব বোরখা হিজাবের ভিতরে দুষ্টামি ভন্ডামি আরো বেশি লুকিয়ে থাকে। পরে আরেকজন শিক্ষক ওনাকে আরো বোঝানোর চেষ্টা করেন মুসলিম সমাজে পর্দা মেইনটেন করে চলতে হয়। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই তা শুনতে চাননি এবং অনেক ধরনের বাজে মন্তব্য করেছিলেন। পূর্বেও একবার তিনি আমাকে আমার পরিহিত হিজাব নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন। তখন আমি কিছুই বলিনি ভেবেছিলাম সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। এসব কথায় আমি খুবই কষ্ট পাই এবং মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরি। ওই অবস্থায় আমার মানসিক অবস্থা দেখার মত ছিল না এবং লজ্জাবোধ করি। একটা সাড়ে পাঁচ বছরের বাচ্চার ধর্মীয় পোশাক নিয়েও এমন কটুক্তি করেছিলেন যা আমাকে খুবই কষ্ট দেয় এবং আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে।

  • কুমিল্লা