“সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প” বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলের উপর চাপ কমিয়ে অধিক মুনাফা পাচ্ছেন কৃষকরা

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

Spread the love

বিদ্যুৎ ও ডিজেলের উপর চাপ কমবে সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে। অল্প খরচে অধিক জমিতে সেচ দেওয়া যায় এ পদ্ধতিতে। এদেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। কৃষি পন্য উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাই কৃষকের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন কল্পণা করা যায় না। কৃষি খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র রয়েছে। তাই কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে। কৃষি কাজে কৃষকের উৎসাহ বৃদ্ধি করার জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এবং কৃষক-কৃষানীদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সেচের খরচ কম হয়-তাই কৃষককে ডিজেলের ভর্তকী প্রদান করা হয়। বর্তমানে কৃষিজাত পন্য উৎপাদন করতে হলে সেচের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষরা আর অনাবৃষ্টির কারণে বিশেষ করে ধান উৎপাদন করতে পাম্পের সাহায্যে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করতে হয়। এতে কৃষকের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। ডিজেল ও বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হয়। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে সেচ প্রদান করার কার্যক্রমে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের সাহায্যে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত পাম্পের চেয়ে অর্ধেক মূল্যের কম খরচে জমিতে পানি সেচ দিতে পারছে কৃষকরা। সম্প্রতি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার সেচ পাম্প প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম। জানা গেছে, এই উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় দুটি সেচ পাম্প রয়েছে। উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নে ও মাধবপুর ইউনিয়নে এ দুটি পাম্প রয়েছে। এই পাম্প দুটোর আওতায় ৪০ একর ফসলি জমি রয়েছে। এই পাম্প সূর্য ওঠার পর থেকে চালু হয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত চলে। তবে আকাশা মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ও ঝড়বৃষ্টি হলে বা প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগের কারণে সূর্যের মুখ দেখা না গেলে পাম্পের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের জিরুইন এলাকার কৃষক বাছির উদ্দিন, আহমদ উল্লাহ ও সিরাজুল ইসলাম জানান, বোরো আবাদে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত পাম্পে তাঁদের ব্লকে ৪৫ টাকা হারে প্রতি শতাংশ জমিতে সেচের পানি পেয়েছেন। তবে যদি সৌর পাম্পে পানি পেতেন তাঁদের বোরো আবাদে খরচ অনেক কম হতো। তাঁদের ফসলি মাঠ সৌর সেচের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তাঁরা। উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার কৃষক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সৌর পাম্পের মাধ্যমে পাওয়া পানিতে বোরো মৌসুমে আমি ৬৩ শতক জমি আবাদ করেছি। বিদ্যুৎ ও ডিজেল দিয়ে চলা পাম্পের খরচের তুলনায় সৌর পাম্পে খরচ কম হয়েছে। এতে আমি বোরো আবাদে সেচের খরচের দিক থেকে লাভবান হয়েছি।’ বিএডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈম সৌরভ বলেন, ‘কৃষিতে সেচ খরচ কমিয়ে আনতে ও সহজেই সেচ সুবিধা পাওয়ার লক্ষে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), সেচ বিভাগ নানা রকম কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তার-ই ধারাবাহিকতায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে, ষাইটশালা মৌজায় ১ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সোলার এলএলপি সেচ পাম্প এবং মালাপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর মৌজায় ০.৫ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি এলএলপি সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ১ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার সেচ পাম্প পরিচালনার জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে ৩০ টি ৫৪০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার প্যানেল যা পাম্প মোটর পরিচালনার জন্য মোট ১৬.২ কিলোওয়াট ক্ষমতা সরবরাহ করে থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘সোলার পাম্প স্থাপন ও ভূগর্ভস্থ সেচ নালা নির্মানের ফলে একদিকে যেমন কৃষকের সেচ খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে অপরদিকে কৃষকের জমি অপচয় রোধ হয়েছে। প্রতিটি ১ কিউসেক সোলার এলএলপি সেচ যন্ত্রের এর মাধ্যমে ৪০ একর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘সৌর সেচ পাম্প একটি কৃষক সাশ্রয়ী প্রকল্প। বিদ্যুৎ, ডিজেল ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির দাম এবং প্রাপ্যতার প্রভাব থেকে কৃষিকে মুক্ত করতে সৌর সেচ পাম্প ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। এটি কৃষক সাশ্রয়ীর পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধবও। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ হবে। সৌর সেচ পাম্প স্থাপনে প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হলেও সৌর পাম্প থেকে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সুফল কৃষকেরা পেতে পারেন। কুমিল্লা পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির-২এর বুড়িচং জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন-সরকার বর্তমানে রুপটপ সোলার স্থাপনের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। বুড়িচংয়ে ইতিমধ্যে ৩টি রুপটপ সোলার স্থাপন করা হয়েছে। যদি একটি বাড়িতে সোলার স্থাপন করা হয় তাহলে ০.২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এই প্রকল্পের উপকারীতা সর্ম্পকে সাধারণ গ্রাহককে বুঝাতে পারলে বিদ্যুৎ বিভাগ ও গ্রাহক উভয়েই লাভবান হবে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, সৌর সেচ পাম্প একটি কৃষকবান্ধব প্রকল্প। এতে কৃষকের ফসল আবাদে খরচ কম হয়। পরিবেশের দূষণও হয় না। উপজেলার মালাপাড়া এবং মাধবপুরে এ ধরণের দুটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। উপযুক্ত স্থান ও সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া সাপেক্ষে এ ধরণের আরো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া