কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোট বড় খাল রয়েছে, এই খালগুলো অনেক পূর্বে খনন করা হয়েছিল, দুই উপজেলার কৃষি উন্নয়নের জন্য এবং বৃষ্টির মৌসুমে যেন পানি দ্রæত নিঃষ্কাশন হয় এবং কৃষি জমিগুলোর ফসল বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে যেন রক্ষা পায়। দুই উপজেলার অনেক কৃষক রয়েছে, যারা জিবন জীবিকার জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। শস্যপন্য ও সবজি উৎপাদনই তাদের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। তাই এই দুই উপজেলার কৃষিখাতকে উন্নত করতে হলে খালগুলো দ্রæত পুনঃখনন করা প্রয়োজন।এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিপণ্য হলো ধান। ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে অনেক কৃষক পরিবারের যাবতীয় চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বছরের অন্যান্য ফসলের তুলনায় এ অঞ্চলের মানুষ বোরো ধান বেশি রোপণ করে, কিন্তু বর্তমানে প্রধান প্রধান খাল দীর্ঘ দিন খনন না করায় পলি জমে বেশির ভাগ খাল ও নালা ভরাট হয়ে গেছে। তা ছাড়া কিছু ভূমিদস্যু ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে খালগুলো ভরাট করে ঘরবাড়ি ও দোকান নির্মাণ করেছে। ফলে দিনে দিনে পানি নিষ্কাশনের খাল ও নালাগুলো অস্থিত্বহীন হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং উজান থেকে ভারতের পানি নেমে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট ছোট খাল ও নালাগুলোর অস্তিত্ব নেই। সড়কের কালভার্ট ও ব্রিজগুলো দেখতে পাওয়া যায়। ব্রিজ ও কালভার্টগুলো খাল ও নালার ওপর অবস্থান করার শেষ চিহ্ন হিসেবে টিকে আছে, যা দেখলে বোঝা যায় এখান দিয়ে একসময় খাল ও নালা ছিল এবং এতে পানি প্রবাহিত হতো। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের তদারকির অভাবে ক্রামন্বয়ে খাল ও নালাগুলো ভরাট হয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এই খাল ও নালাগুলো প্রথম খনন করার পরে আবার কবে খনন করা হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। মাঝে মধ্যে খাল খননের কোনো কর্মসূচি বা কোনো প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও তা থাকে কাগজে-কলমে। বাস্তবে তা কখনো আলোর মুখ দেখতে পায়নি। যে কৃষক ও কৃষি উন্নয়নের খালগুলো পুনঃখনন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল তা কাঙ্খিত হয় নাই। বুড়িচং উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ফসলের মাঠের নাম হলো পয়াতের জলা। যার মধ্যে বুড়িচং উপজেলা ও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক ধান চাষ করে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মেটান। কিন্তু কয়েক দশক ধরে এই মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য চার দিকের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা ঘরবাড়ি ও দোকান নির্মাণ করার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলে বোরো ফসল প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে কৃষকের জীবনে দুর্দশা নেমে আসে। প্রতি বছর বর্ষার পানিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ধান চাষ করা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুড়িচং বাজারসংলগ্ন পশ্চিম পাশের খালটিও ভরাট হয়ে প্রায় নালায় পরিণত হয়েছে। এটি পয়াতের জলার পানি নিষ্কাশনের প্রধান খাল। খালটির দুই পাশের বেশির ভাগ জায়গা ভরাট করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তা ছাড়া রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর পশ্চিমপাড়া এলাকায় খাল ভরাট করে সাবেক মেম্বার জজু মিয়ার ছেলে বাড়ি নির্মাণ করেছে। পূর্ণমতি বাজারসংলগ্ন খালটি মসজিদ গেট পর্যন্ত ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ করেছে। পূর্ণমতি বাগানবাড়ী থেকে কান্দারপাড় গুংগুর নদীর সাথে সংযোগ খালটির বেশির ভাগ ভরাট করার হয়েছে। জরইন গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের খালটিও ভরাট করে ফেলেছে স্থানীয় কিছু ভূমিদস্য। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, উপজেলার পয়াতের জলায় ধান চাষ করে তাদের খাবারের চাহিদা পূরণ করে থাকেন; কিন্তু ওই জলার পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল ও নালা রয়েছে তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তাদের রোপণকৃত ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এতে সারা বছর তাদের কষ্টে কাটে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড় ভাঙ্গাইনা থেকে জিরুইন হয়ে সাহেবাবাদ বাজার পর্যন্ত খালটির বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে গেছে। বিশেষ করে সাহেবাবাদ বাজারের ময়লা আর্বজনা ফেলে ময়লার স্তুপে পরিনত করা হয়েছে। সাহেবাবাদ বাজার থেকে নগরপাড় খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গেছে। চান্দলা টানা ব্রীজ হতে শীদলাই পর্যন্ত খালটি বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি নিঃস্কাশনের ব্যাগাত হচ্ছে। নাগাইশ থেকে ঘুঙ্গুর নদীর সংযোগ খালটিও পুনঃখনন করা প্রযোজন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় ফসলের মাঠ হলো ধান্যদৌল, নাইঘর ও নাগাইশের মাঠ। চান্দলা টানা ব্রীজ থেকে নাইঘর আলী আকবর চেয়ারম্যানের বাড়ীর উত্তরপাশ হয়ে যে খালটি রয়েছে তাতে বিভিন্ন স্থানে বাধ দিয়ে মাছের ঘের করায় পানি নিঃস্কাশনের ব্যাহত হচ্ছে। নাল্লা বড় মসজিদের সামনে দিয়ে দুলালপুর বাজারের পশ্চিম পাশের খালটিও খনন করা প্রয়োজন। স্থানীয় কৃষকরা মনে করে বর্ষার মৌসুম আসার পূর্বে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার খালগুলো পুনঃখনন করা প্রযোজন।