বয়স ৭০ ছুই ছুই। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পেনশনের ২৫ লাখ টাকাসহ নিজের প্রায় সর্বস্ব ব্যয় করে গড়ে তুলেছেন একটি মসজিদ। এমন উদ্যোগে স্থানীয়দের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের বেড়াখলা গ্রামের বাসিন্দা। নিজের ১০ শতাংশ জমিতে বাইতুন নূর জামে মসজিদের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন হাফিজিয়া মাদ্রাসা। সেখানে পড়ছেন ২৫৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন। তিনি হলেন মাওলানা গিয়াস উদ্দিন। জানা যায়, দীর্ঘদিন ওয়াহেদপুর আলিম মাদরাসায় তিনি শিক্ষকতা করেন। মাওলানা গিয়াস উদ্দিন শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের সেবা করেন। পেনশনের টাকা ও নিজের সম্পদ দিয়ে তিনি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করছেন। মাওলানা গিয়াস উদ্দিন বলেন, নিজের সন্তান নেই। মৃত্যুর পর সম্পদ দিয়ে কী হবে? আমাদের জন্য কে দোয়া করবে? এই চিন্তা থেকে পেনশনের সব টাকা দিয়ে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করি। এখানে পাশাপাশি একটি হিফজ মাদ্রাসা রয়েছে। দ্বিতীয় তলা মসজিদটির ছাদ ঢালাইয়ের পর অর্থ সংকটে অনেকটা বন্ধ রয়েছে কাজ। চাকরি শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে পেনশনের ২৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা পান তিনি। তা দিয়ে পরিবার ও নিজের ১০ শতাংশ জমিতে এই মসজিদ ও মাদ্রাসার নির্মাণকাজ শুরু করেন। মসজিদ নির্মাণে এখন পর্যন্ত ধার করেছেন ৫ লাখ টাকা। পরিবারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই, তিন বোন। ৫ শতক জমি আমার। বাকি ৫ শতক যৌথ, সবাই সাহস দেওয়ায় আমি কাজটি করতে পেরেছি। আর স্ত্রী নিজ থেকে তার জমানো ৩ লাখ টাকা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। বন্ধু ও সহকর্মীরা এই দানের জন্য তাকে অভিনন্দিত করছেন বলেও তিনি জানান। মাওলানা গিয়াস উদ্দিন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘তার জীবনের শেষ একটি ইচ্ছা এই মসজিদ নির্মাণ করা। কোনো কিছু না ভেবে কাজ শুরু করেছেন। কাজের কিছু অংশ আটকে আছে। কেউ এগিয়ে না এলে বাকি সম্পত্তি বিক্রি করে কাজ শেষ করবেন। স্বামী-স্ত্রীর ভরণপোষণের বিষয়ে বলেন, আল্লাহ দুটি পেট চালিয়ে নেবেন। তিনি এই দানের সুযোগ পেয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানান। এবিষয়ে শিদলাই ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর বলেন, সমাজে এমন দাতার সংখ্যা বিরল। মাওলানা গিয়াস উদ্দিনের দানটি ব্যতিক্রম। তিনি তার প্রায় সর্বস্ব দিয়ে দিয়েছেন। আমরা যথাসাধ্য তাকে সহযোগিতা করব।