কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেওয়ায় খাল বিলের পানিতে জন্মানো কচুরিপানার কদর বেড়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় পর পর দুইটি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খড় সংকট এবং বাজারে গো-খাদ্যের দাম হাতের নাগালে না থাকায় গবাদিপশু বাঁচিয়ে রাখতে প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারীরা কচুরিপানা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার ( ১৫ নভেম্বর ) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর ভয়াবহ বন্যায় আউশ ধান, জমিতে রোপণ করা আমন ধানের চারা ও গো-খাদ্য ঘাড নষ্ট হওয়ায় এ উপজেলায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেয়। কিছু কিছু এলাকায় খড় পাওয়া গেলেও প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারীদের হাতের নাগালে নেই দাম। বাজারে বিক্রি করা গো-খাদ্যের দামও আকাশচুম্বী। যার ফলে প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারী গৃহস্থরা পড়েছেন চরম বিপাকে। গবাদিপশু ( গরু ) বাঁচিয়ে রাখতে তারা বাড়ির পাশের খাল, বিল ডোবায় জন্মানো কচুরিপানা তুলছেন। গো-খাদ্য হিসেবে কচুরিপানাই এখন তাদের শেষ ভরসা। কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কচুরিপানা না পেয়ে রিকশাভ্যান ভাড়া করে কেউবা পায়ে হেঁটেই দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করছেন কচুরিপানা। অনেক খামারিও গো-খাদ্য সংকটের কারণে শ্রমিক দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করছেন।
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার গৃহস্থ সোলেমান মিয়া বলেন, এবার বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় মানুষের খাদ্যেরই অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা এবার আউশ ফসল ঘরে তুলতে না পারায় গরুর খাদ্যের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। খালে বিলে এই কচুরিপানা না থাকলে গরুগুলো বাঁচিয়ে রাখাই কষ্ট হয়ে যেত।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার গৃহস্থ আবদুল কাদের বলেন, বন্যা শেষের দিকে আমি আমার বাড়ির পাশের ডোবায় কচুরিপানা জমিয়ে রেখেছিলাম। এগুলো জমিয়ে রাখায় আমার অনেক উপকার হয়েছে। বন্যায় আউশ ধান নষ্ট হওয়ায় এখন গরুর খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। আমি এখন প্রতিদিন ডোবা থেকে গরুগুলোর জন্য কচুরিপানা তুলছি। এতে আমার গরুর খাদ্যের অভাব কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, কচুরিপানা একধরনের বহুবর্ষজীবী ভাসমান উদ্ভিদ। উদ্ভিদটি গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কৃষিতাত্ত্বিকভাবে বিবেচনা করলে এটি একটি আগাছা। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। এজন্য নিচু ফসলি জমিতে বিশেষ করে ধানের জমিতে এই উদ্ভিদকে আগাছা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বন্যা পরবর্তী সময়ে চাষকৃত ঘাসের জমি আক্রান্ত হওয়ার ফলে গো-খাদ্য হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে এক দিকে যেমন নিচু ফসলী জমিতে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণে থাকবে অন্যদিকে গো-খাদ্যের চাহিদাও মিটবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজমাল হাসান বলেন, বর্তমান সময়ে গো-খাদ্য সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা। বন্যায় এ উপজেলার আউশ ধান নষ্ট হওয়ায় গরু মহিষ পালনকারীরা খড় সংগ্রহ করতে পারেননি। বন্যার কারণে ধানের পাশাপাশি গো-খাদ্য ঘাস পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ৬ টি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনকে ২৫ কেজি করে গো-খাদ্য দিতে পেরছি। অথচ গো-খাদ্য সংকটের কারণে প্রাণী সম্পদ অফিসে দরখাস্ত পড়েছে প্রায় ৩ হাজার। আমরা বাকিদের জন্য গো-খাদ্যের কোন ব্যবস্থা করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, শুধু কচুরিপানার উপর নির্ভর করে গবাদিপশু লালন পালন করা অত্যন্ত কষ্টের। তবে এ মৌসুমে খাল-বিলে প্রচুর কচুরিপানা পাওয়া যাচ্ছে। এতে গবাদিপশু পালনকারীদের জন্য উপকার হয়েছে। তবে কচুরিপানা গরু বা মহিষকে খাওয়ানোর পূর্বে রোদে শুকিয়ে খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো ভালো।