কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার বড়ধুশিয়া আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও কলেজের দাতা সদস্য। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের নিকট গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ ও গত ২৪ সেপ্টেম্বর কলেজটির এক দাতা সদস্য দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০০৪ সালে অধ্যক্ষ মোঃ জয়নাল আবেদীন সরকার নিয়োগের আবেদনপত্রে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হিসাবে আবেদন করেন। তৎকালীন গভর্ণিং বডি তাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার পর অধ্যক্ষ পদে যোগদানের সময় স্নাতক ডিগ্রিতে ২য় শ্রেণি লেখাটি ঘষামাজা করে ৩য় শ্রেণির লিখে ফৌজদারী অপরাধ করিয়া জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন এবং বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎকালীন গভর্ণিং বডির সভাপতিকে বিশাল অংকের ঘুষ প্রদান করেন। অভিযোগ পত্রে তারা উল্লেখ করেন, বিগত ২০২২-২৩ সালের গভর্ণিং বডির মেয়াদকালে কলেজের আয়-ব্যয় হিসাব চাওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ঐ সময়ে অধ্যক্ষ মোঃ জয়নাল আবেদীন সরকার কলেজের তহবিল হইতে ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও ঐ কমিটি তদন্তকালে দেখেন করোনাকালীন সময়ে অধ্যক্ষ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করোনাকালীন ভাতা হিসাবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। গত ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের ৫ তারিখে কলেজের মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দকৃত দুই মেট্রিকটন চাল ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন, যার কোন প্রকল্প কমিটি ও গভর্ণিং বডির রেজুলেশন নাই। অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন সরকার, ২০২৩-২৪ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির ৩ লাখ টাকা নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ২০০৪ সালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ফি, ফরম ফিলআপের ফি, সাময়িক পরীক্ষা ফি বাবদ প্রায় ৫০ লাখ টাকারও বেশি কলেজ তহবিল হইতে আত্মসাৎ করেন অধ্যক্ষ। অভিযোগ পত্রে তারা আরও উল্লেখ করেন, বড়ধুশিয়া আদর্শ কলেজটি এক সময়ে উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ ছিল। এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফলাফল ছিল সন্তোষজনক। ছাত্রসংখ্যা ছিলো প্রচুর। বর্তমান দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী লম্পট চরিত্রের অধিকারী মো. জয়নাল আবদীন সরকারের কারণে সামান্য কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে কলেজটি দাড়িয়ে আছে। অধ্যক্ষের কারণে কোন ছাত্র- ছাত্রীই এ কলেজে ভর্তি হচ্ছে না। অভিভাবকরাও তাদের ছেলে-মেয়েকে এ কলেজে দিতে আগ্রহী নন। চলতি মাসে মাত্র একদিন কলেজে এসে দুই দিনের হাজিরা খাতায় দস্তখত করেন অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন। বছরের অধিকাংশ সময় কলেজে অনুপস্থিত থেকে পরে হাজিরা খাতায় দস্তখত করেন তিনি। চাকুরীকালীন সময়ে কলেজ থেকে কোনদিনও ছুটি নেন এমন কোন রেকর্ড নাই। ছুটিতে থেকে পরবর্তীতে হাজিরা খাতায় দস্তখত করে আসছেন এই অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন সরকারের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন কলেজটির দাতা সদস্য ও এলাকাবাসী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষকে শোকজ করা হলে সে জবাব দিয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয়টি এই সপ্তাহের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।