কুমিল্লা জেলা তথা দেশের অন্যতম বৃহত্তম সবজি বাজার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসারে অবস্থিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে থাকা এই জনপদকে ঘিরে ‘৮০’র দশকে বাজারটির গোড়াপত্তন হয়। কালক্রমে এটা দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিতি পায়। বাজারটিতে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ শতাধিক বিভিন্ন শ্রেনীর যানবাহনের মাধ্যমে তরকারী, মৌসুমী ফলসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে আসে এবং এখান থেকে কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা ক্রেতারা এসব পণ্য কিনে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন বাজারটিতে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভীড় হলেও বাজারটিতে যত্রতত্র সবজির উচ্ছিষ্টসহ ময়লা আবর্জনা ফেলায় পুরো বাজারটি কর্দমাক্তসহ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে খোঁজ খবর নেই বাজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ রয়েছে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতারা। কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজারটি বর্তমানে দেশ জুড়ে পরিচিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসারে বাজারটির অবস্থান। মহাসড়কের দু’পাশের কমপক্ষে দু’শ মিটারেরও বেশী এলাকাজুড়ে চালু রয়েছে বাজারটি। প্রতিদিন রাত যত গভীর হয় বাজারের ব্যস্ততা তত বাড়তে থাকে, আবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাজারের কর্মব্যস্ততা কমে যায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সহ স্থানীয় বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত তরকারী, মৌসুমী ফলসহ নানা পণ্য কাভার্ডভ্যান, ট্রাক যোগে নিয়ে আসে বিক্রেতারা। আবার সেখান থেকে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এমনিতেই রয়েছে উন্নতমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তবে এই বাজারটিতে নেই কোন ময়লা অবর্জনা ফেলার স্থানও। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমান পন্য আসায় বিরাট উচ্ছিষ্ট অংশের স্তপ জমে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যত্রতত্র এসব উচ্ছিষ্ট রাস্তার উপরে কখনো বা বাজারের আশপাশে সড়কের পাশে অবাধে ফেলায় সড়কের পাশের ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ভারী যানবাহনের চাপে ড্রেনের উপর থাকা ¯øাবগুলোও ভেঙ্গে যাওয়ায় পানি নিস্কাশনেও বাধাগ্রস্থ হয়ে বাজারের কিছু অংশে একদিকে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে তরকারীর উচ্ছিষ্ট পঁচে কর্দমাক্ত অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় হাঁটা-চলায় চরম অসুবিধা হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের। এছাড়াও বাজারের আশপাশের মহাসড়কের কোল ঘেষে ৩/৪’শ মিটার এলাকাজুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বায়ূদূষণ, শ্বাসকষ্টসহ নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। উচ্চ আদালত কর্তৃক মহাসড়কের পাশে বাজার বসার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিমসারে প্রতিদিনই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিক-আপ, ট্রাক্টর, অটোভ্যান, সিএনজি অটোরিক্সা, ইজিবাইকসহ শত শত রিক্সা ভ্যানযোগে সড়কের উপরই চলে মালামাল উঠা-নামানোর কাজ। এতে করে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবান, সেন্টমার্টিনসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আগত যানবাহনগুলোর চালকদেরও যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উল্লেখ্য দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সব্জী বাজারটি প্রতিবছর আনুমানিক ৫/৬ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমস্যাগুলো নিরসনে বাজার পরিচালনাকারীদের কোন নজর নেই। বিষয়টি জানতে চাইলে বাজারের ব্যবসায়ী কবির হোসেন লিটনসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কোন অভিভাবক নেই। আমরা কি অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করছি সেটা একমাত্র আল্লাহ-ই জানেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নিমসার বাজারের ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় মোকাম ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সাহেব আলী বলেন, প্রতিবছর এই বাজার থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও সংস্কারে নেই কোন উদ্যোগ। হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়ৎদারের ব্যবহারের জন্য টয়লেট সুবিধা না থাকায় যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগসহ ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠেছে। এছাড়াও মহাসড়কের উপরসহ আশপাশের এলাকায় তরকারীর আবর্জনা ফেলা সেগুলো পঁচে যেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, তেমনি রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কের দু’পাশে অবাধে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। তিনি দ্রæত উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে সমস্যাগুলোর সমাধানের অনুরোধ করেন। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, বাজারের ময়লা-আবর্জনা সরানোর দায়িত্ব আমাদের না, এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন বিষয়টি দেখেছেন। দ্রæতই সমাধান হবে। আর বাজারটি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় টয়লেট, ডাষ্টবিন নির্মান করা যাচ্ছে না।