“বিধি থাকলেও প্রয়োগ নেই” বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় সঠিক তদারকির অভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ ছাড়াই চলছে গবাদিপশু জবাই

লেখক: স্টাফ রিপোর্টর
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

মানুষের শরীরে পুষ্টির অন্যতম উপাদান হলো গরুর মাংস। মানুষের দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা মেটাতে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন হাট-বাজারে রয়েছে গবাদিপশু জবাই করার জন্য জবাই হাউজ এবং বিক্রয়ের জন্য রয়েছে মাংসের দোকান। দুই উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ ছাড়াই অবাধে চলছে রুগ্ন গবাদিপশু জবাই। গবাদিপশু জবাই করার বিধি বিধান থাকলেও কোথাও তার প্রয়োগ নেই। গবাদিপশু জবাই করার পূর্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোন বাজারেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম নীতি। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলায় নিয়োজিত ভেটেরিনারি সার্জন কিংবা প্রাণিসম্পদ কর্তকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ ছাড়াই চলছে পশুজবাই ও মাংস বিক্রয়। মাংস ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে গরু ক্রয় করছে এবং নিজেদের ইচ্ছে মতো জবাই করে বিক্রয় করছে। দু-উপজেলার প্রতিটি বাজারে গবাদিপশু জবাই করা হয় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে। এতে পরিবেশও দূষণ হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষীপাড়া, মাধবপুর, বাগড়া, শশীদল, চান্দলা, বেজুড়া, ব্রাহ্মণপাড়া সদর, সাহেবাবাদ, বালিনা, ধান্যদৌল, বড়ধুশিয়া বাজার এবং বুড়িচং উপজেলার লাটিয়ার বাজার, ভারেল্লা, শংকুচাইল, ফকির বাজার, ছয়গ্রাম, ভরাসার, কাবিলা, নিমসার, বুড়িচং সদর, কংশনগর, দেবপুর, ময়নামতি বাজারে প্রতিদিন গবাদিপশু জবাই করা হয় এবং বিক্রয়ের হাট বসে। পশুজবাই করার বিধি বিধান থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় প্রতিনিয়তই অসুস্থ ও রুগ্ন গবাদিপশু জবাই করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, সবার অগোচরে পশু জবাই হয়। নির্দিষ্ট কসাইখানা না থাকার ফলে সুস্থ নাকি অসুস্থ পশুর মাংস টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছি তা আমরা কেউ জানি না। বুড়িচং উপজেলার ভরাসার এলাকার আবদুল জলিল বলেন,গবাদিপশু জবাই করার জন্য শুনেছি ডাক্তারি সার্টিফিকেট লাগে, কিন্ত কখন গবাদিপশু জবাই করা হয় আর কখনই বা ডাক্তারী সার্টিফিকেট আনে তা আমরা জানি না। মনে হয় কসাইরা নিজের ইচ্ছে মতোই গবাদিপশু ক্রয় করে এবং জবাই করে বিক্রয় করে। রুগ্ন ও অসুস্থ্য গবাদিপশু জবাই করে বিক্রয় করার নজির রয়েছে। তাই প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাদের তদারকি করতে হবে, যেন কোন ধরনের অসুস্থ্য গরুর মাংস বিক্রয় না হয়। গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ছাড়পত্র চিকিৎসক দিচ্ছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর বাজারের রাসেল বলেন, আগে একসময় ডাক্তার আসতো, এখন কেউ আসে না। তবে প্রতিমাসে একবার আমাদেরকে অফিসে ডেকে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার নানা নিয়মকানুন ও কাগজপত্রের বিষয়ে আলোচনা করেন। এলাকার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এসব গবাদিপশুর বিভিন্ন জটিল রোগ থাকতে পারে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া জবাই করা এবং তার মাংস বাজারে বিক্রি করা আইনত অপরাধ হলেও তা উপেক্ষা করে বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে জবাই করা হচ্ছে গবাদিপশু, এবং বিক্রি করা হচ্ছে তার মাংস। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে । ব্রাহ্মণপাড়ায় উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর পারভীন সুলতানা বলেন, বাজারে মাংস বিক্রির জন্য পশু জবাইয়ের সরকারি বিধিবিধান রয়েছে। পশু জবাইয়ের পূর্বে পশুটি সুস্থ কিনা এটা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দেখে সার্টিফাইড করে একটি সার্টিফিকিট দেবেন। এটা মাংস দোকানী দোকানে ঝুলিয়ে রেখে ওই পশুর মাংস বিক্রি করবেন। পশুটি দিবালোকে একজন হুজুরের মাধ্যমে জবাই করতে হবে। আর আমি পশুর রানে দুটো সীল দিয়ে দেবো। কিন্তু বর্তমানে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। বুড়িচং উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের উসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা বুড়িচং উপজেলার প্রায় সব কয়টি বাজারে তদারকি করছি। কিন্ত ভরাসার বাজার ও ছয়গ্রাম বাজারে মাংস ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ম নীতির মধ্যে আনতে পারছি না। তারা কোন কথাই শুনতে চায় না। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইজমাল হাসান বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্টার হাউসে গবাদিপশু জবাইয়ের নিয়মনীতি চালু আছে। এক সময় ব্রাহ্মণপাড়ায়ও স্টার হাউস ছিল, ব্রাহ্মণপাড়ায় আপাতত নির্দিষ্ট কোনো স্টার হাউস নেই। তবে স্টার হাউস হওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আপাতত স্টার হাউস না থাকায় একইস্থানে উপজেলার সব পশু জড়ো করে জবাই করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক মাংস বিক্রেতা রয়েছে, এদিকে আমাদের এতো লোকবল নেই যে সব জায়গায় পাঠানো সম্ভব। আর পশু পরীক্ষানিরীক্ষা করে সার্টিফিকিট দেওয়ার কথা উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন এর। সে পদটিও আপাতত খালি রয়েছে। তবে স্টার হাউস হয়ে গেলে এবং ভেটেরিনারি সার্জনের খালি পদটি পূর্ণ হয়ে গেলে সঠিক নিয়মেই নির্দিষ্ট স্টার হাউসে উপজেলার সব মাংস বিক্রেতার গবাদিপশু জবাই হবে। স্টার হাউসটি উপজেলার সাহেবাবাদে হওয়ার কথা রয়েছে। বুড়িচং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জেরিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলেন, এই বিষয়ে আপনার সাথে সাক্ষাতে পরে কথা বলবো। এখন কিছু বলতে পারছি না।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া