‘ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায়’ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রতি বছর অগ্নিকান্ডে কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কুমিল্লা জেলা সদর হতে ২২ কিলোমিটার উত্তরে ১২৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাটি অবস্থিত। এই উপজেলার ৬৫টি গ্রামে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার লোকের বসবাস। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন অফিস এবং এনজিও অফিস, বেসরকারী এতিমখানা, মসজিদ, মন্দির , সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের শাখা এবং ক্ষুদ্র কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন ছোট বড় কল-কারখানা রয়েছে। ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলায় কান্দুঘর, চান্দলা, দুলালপুর, ধান্যদৌল, বাগড়া, ব্রাহ্মণপাড়া সদর, মাধবপুর,মালাপাড়া, রামনগর, শিদলাই, ষাইটশালা, সাহেবাবাদ, সেনের বাজার ও হরিমঙ্গল বাজারসহ ১৪টি বাজার রয়েছে। এ সব হাটবাজারে কল-কারখানা, পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিন এর অস্থায়ী মজুদারদের বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সব দোকানগুলোতে যে কোন সময় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া অতিমাত্রায় গরম বৃদ্ধির ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন না থাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক আগুণ নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয় না। অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটার পর বুড়িচং থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসতে আসতে আগুণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। ফলে মানুষের বাড়ী-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে উপজেলা সদর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের বসতবাড়ীতে অগ্নিকান্ডের ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ আগুণে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারী সাহেবাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামে অগ্নিকান্ডের ফলে ১৪টি দোকান ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১১ মার্চ উপজেলা সদরের দীর্ঘভূমি গ্রামের বিরম খা এর ফার্ণিচার দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকার ফার্ণিচার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাছাড়া গত ২৩ এপ্রিল চারিপারায় ২টি পাটের গুদামে আগুণ লেগে প্রায় ৯ লক্ষ টাকার পাট পুড়ে যায় এবং একই দিনে শশীদল ইউনিয়নের দক্ষিণ শশীদল সেনের বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৮টি দোকান ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত ২৮ এপ্রিল সাহেবাবাদ দক্ষিণ পাড়ার মো. মনিরুজ্জামানের মুদি দোকানে আগুন লেগে দোকান ঘরটি পুড়ে যায়। উক্ত অগ্নিকান্ডের ফলে মনিরুজ্জামানের প্রায় ৩ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই বছরের বিগত চার মাসে এসব অগ্নি দূর্ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকান্ডের ফলে এই পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে মানবতের জীবন যাপন করছে। অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতির ফলে বিভিন্ন সংস্থা কিংবা সরকারী অনুদান পেলেও তা ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল। উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, অতি দ্রæত এই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন দরকার। এতে করে জনগণের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও কমানো যাবে। বুড়িচং উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনকে খবর দিলে আসতে আসতে দেরী হয়ে যায়, ততক্ষণে সব শেষ হয়ে যায়। তবে আশার কথা সাহেবাবাদ ইউনিয়নে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। শিদলাই আমির হোসেন জোবেদা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন,অগ্নিকান্ডের কবল থেকে সাধারণ মানুষের জান ও মাল রক্ষার জন্য অতি দ্রæত ব্রাহ্মণপাড়ায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপন করা প্রয়োজন। ব্রাহ্মনপাড়া ওশান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ব্রাহ্মনপাড়ায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপন হলে অগ্নিকান্ডের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। অতি শীঘ্রই আমাদের উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন দরকার। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্থবায়ন কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক বলেন, এ উপজেলায় বিভিন্ন হাট-বাজার এবং বাড়ি ঘরে প্রতি বছর অগ্নিকান্ডে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সামান্য কিছু অনুদান দিলেও এতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠা যায় না। একটি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন থাকলে উপজেলার জনগণ সুফল পাবে। এরই আলোকে উপজেলার সাহেবাবাদ এলাকায় কুমিল্লা মীরপুর এম এ গণি সড়কের পাশে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

  • ব্রাহ্মণপাড়া