“ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হুন্ডি” বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় সক্রিয় শতাধিক হুন্ডি সিন্ডিকেট চক্র

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

Spread the love

কুমিল্লা জেলার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের গড়ে উঠেছে শতাধিক হুন্ডি সিন্ডিকেটের চক্র। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেশির ভাগ হুন্ডির টাকা লেনদেন করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে হুন্ডির টাকা লেনদেন করা হয়। অনুমোদনহীন ভাবে কিংবা মানি এক্সচেইন লাইসেন্স না নিয়ে ডলার, রিয়ালসহ বিভিন্ন বৈদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সী ও ব্যাংকের আসে-পাশে ডলার ক্রয়-বিক্রয়কারীদের চক্র দেখতে পাওয়া যায়। চক্রগুলো ব্যাংক থেকে বেশি দামে ডলার ও রিয়ালসহ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। এতে সাধারন মানুষ প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপর দিকে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করার ফলে অনেক প্রবাসী ডলার ও রিয়ালসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মুদ্রা পাচারকারীদের নিকট বিক্রয় করে। এতে দেশের টাকা অবৈধভাবে বিদেশে চলে যায়। তার বিপরীতে ডলার সংকটে পরে দেশের ব্যাংকগুলো। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডির টাকা পাচার হওয়ার ফলে প্রবাসীদের অর্জিত ডলার দেশের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে না। হুন্ডি চক্রের সদস্যরা প্রবাসে নেটওর্য়াক তৈরী করে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তাদের এজেন্ট ছড়িয়ে দেয়। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা প্রবাসের সদস্যরা সংগ্রহ করে এবং দেশের নেটওর্য়াকের সদস্যদের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। প্রবাসে থাকা চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে হুন্ডির ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এতে অনেক সময় প্রবাসীদের বাড়িতে টাকা পৌছে না। বিভিন্ন ভাবে প্রবাসীরা হয়রানীর শিকার হওয়ার খবর রয়েছে। তা ছাড়া হুন্ডির লেনদেন নিয়ে অনেক সময় দেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের সাথে প্রবাসে থাকা চক্রের সদস্যদের মধ্যে বড় ধরনের দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। এমনকি এই টাকা নিয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। তবে প্রবাসে থাকা দেশি হুন্ডি চক্রের সদস্যদের কবলে পড়ে অনেকেই সর্বশান্ত হওয়ার নজির রয়েছে। তাই দেশের ডলার সংকট নিরসনে হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। হুন্ডির সিন্ডিকেটের চক্রের সদস্যদেরকে সনাক্ত করে দ্রæত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারী ব্যাংকের ম্যানেজার বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে দেশের অভ্যান্তরে প্রবাসীদের টাকা আসার ফলে একদিকে ব্যাংক ডলার সংকটে ভোগছে অপর দিকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স বোনাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে শুধু লাভবান হচ্ছে হুন্ডি সিন্ডিকেটের সক্রিয় চক্রের সদস্যরা। ফলে দিনে দিনে রিজার্ভের সংকট দেখা দিচ্ছে। ডলার সংকট থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলতে পারছে না। যার ফলশ্রæতিতে দেশের অভ্যান্তরে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর অস্থিত্ব রক্ষার্থে এই হুন্ডি চক্রের সদস্যদের দ্রæত আইনের আওতায় আনা উচিত। হুন্ডি হলো একটি নীতি বহির্ভূত এবং দেশের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর ব্যবস্থা। এটি বিনিময় বিল নামেও পরিচিত। পূর্বে বাণিজ্যিক লেনদেন এবং ঋন আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো এবং এখনও ব্যবহৃত হতে থাকে, তবে এটি সাধারণভাবে অবৈধ উদ্দেশ্যে এবং আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৫৭ কোটি ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার কম। হুন্ডি বেড়ে যাওয়ার কারণে শুধু যে রিজার্ভের পতন হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়, ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। বকেয়া আমদানির বিল পরিশোধ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বাভাবিক রাখতে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে আমদানির দায় হিসেবে ডলার সাশ্রয় হলেও বাস্তবে ডলারের মজুত বাড়ছে না। এদিকে ব্যাংক ও অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জগুলো থেকেও নগদ ডলার সংগ্রহ করা দিনকে দিন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। নগদ ডলারের দাম কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টার ফলে মানি এক্সচেঞ্জগুলোয় ডলারের আনুষ্ঠানিক লেনদেনও প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে ডলার চাহিদার এই চাপ এসে পড়ছে ক্রেডিট কার্ডের বাজারে। নাম প্রকাশে এক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট বলেন, আমরা হুন্ডির সাথে জড়িত নই। বিদেশ থেকে আমাদের একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে বিভিন্ন জনের মোবাইল নাম্বার দিয়ে তাদের টাকা গুলো পাঠানোর জন্য বলে, আমরা সেই অনুযায়ী মোবাইল নাম্বারের সাথে যোগাযোগ করে টাকা পাঠিয়ে দেই।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া