কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিদলাই আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন চলছে জীর্ণশীর্ণ ভবনে। পাঠদান চলকালীন সময়ে ঝুঁকিতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবন। আতঙ্কে থাকে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সুনামধন্য বিদ্যাপিঠ আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নির্মিত ভবন যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শিদলাই আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমানে চারটি ভবন রয়েছে। তার মধ্যে বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের একটি ভবন কিছু দিন পূর্বেই পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। বন্যার পর পর স্কুলের পূর্ব পাশের দুইটি ভবনে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল। ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে ইট, বালু, সিমেন্ট। একাধিক শ্রেনীকক্ষ নিচের দিকে চলে গেছে। একাধিক কক্ষের মেঝে বিলিন হয়ে গেছে বন্যার পানিতে। বৃষ্টি হলে পুরু ভবনের ছাদ দেয়াল দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ে। প্রায় ১২ শত শিক্ষার্থী পড়াশুনা চললে জিবনের ঝুকি নিয়ে। শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে নিজেদের ও শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন ‘আমাদের শ্রেণীকক্ষ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সিঁড়ি ও বিমে ফাটল, মেঝেতে বড় বড় গর্ত এবং ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে জং ধরা রড বের হয়ে আছে, দেখলেই ভয় লাগে। যেকোনো সময় ফ্যান ও পলেস্তারা খসে মাথায় পড়তে পারে। ক্লাস চলাকালে পুরোটা সময় আতঙ্কে থাকি। স্কুলের প্রায় ১২ শত শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে একটাই দাবি আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নতুন ভবন চাই। শিদলাই আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক জানান. সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাক্ষণ দুঃচিন্তায় থাকতে হয়। সন্তানের কাছ থেকে স্কুলের ভবনের বেহাল দশার খবর পেয়েছি। এলাকাবাসীর দাবি বিদ্যালয়ের জন্য একটি নতুন ভবন প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মমিনুল হক ভূইয়া জানান, আমার বিদ্যালয়ের চারটি ভবনের মধ্যে একটি কিছু দিন পূর্ব পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পর থেকে আরো দুইটি ভবনের বিমে, ছাদে, দেয়ালে ফাটলসহ শ্রেনীকক্ষ নিচের দিকে চলে গেছে। প্রতিটি ভবনই পুরাতন হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় অনেক বছর ধরে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি নতুন একাডেমিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সর্ব মহলের সাথে যোগাযোগ করে ডিউ লেটার নিয়ে ঘুরাঘুরি করেও কোনো একাডেমিক ভবনের বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর ভবনগুলোতে লক্ষ লক্ষ টাকা সংস্কার কাজ করে শেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে পরস্পর সংযুক্ত তিনটি দোতালা ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করছে। সরকারিভাবে সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়িত হতে অনেক সময় লাগবে। সরকার থেকে নতুন ভবন কবে পাওয়া যাবে সেটাও অনিশ্চিত। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা মিটিং করা হয়েছে এবং সাম্প্রতিক বন্যায় বাকি ভবনগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় নতুন করে স্থানীয় উদ্দ্যোগে ছয়টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করে পূর্ব পাশের সম্পূর্ণ দোতলা ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এলাকার গুনীজন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ম্যানেজিং কমিটি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা এলাকার সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ এবং কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন একটি নিরাপদ পরিবেশে এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আল্লাহ না করুন কোন একটা দূর্ঘটনা ঘটলে আমরা কেউ কোনভাবেই এই দায় এড়াতে পারবো না। দল মত নির্বিশেষে বিদ্যালয়ের সকল শুভানুধ্যায়ীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ, উপদেশ কিংবা কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ যেভাবেই হোক এই প্রতিষ্ঠানটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।