অধ্যাপক মোঃ ইউনুস স্যারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

Spread the love

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়া) উপজেলা নির্বাচনী এলাকার কৃত্বিমান রাজনীতিবিদ, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষাগুরু, বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সফল জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ্ব অধ্যাপক মো: ইউনুস। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা-৫ আসন থেকে চার বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অধ্যাপক মো: ইউনুস ১৯৪৪ সালের ৪ জুলাই বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মিয়া বংশের মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৌলভী মো: চান্দ মিয়া মুন্সী এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন। তিনি মেট্রিক্যুলেশন পাশের পর পর পাশ্ববর্তী শিবরামপুর গ্রামের প্রভাবশালী, সম্ভ্রান্ত ও বুনিয়াদী পরিবার হাজী নজিমউদ্দিন ও জিনাতুন্নেসা বেগমের কনিষ্ট কন্যা লুৎফুন্নেসা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অধ্যাপক মো. ইউনুস ২০২১ সালের ২৭শে মার্চ বার্ধক্যজনিত কারনে পরলোক গমন করেন। উনার প্রিয়তমা স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম ২০১২ সালের ২২শে জুলাই ঢাকার অদুরে বুলতা নামক স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরন করেন। অধ্যাপক মো: ইউনুস ও লুৎফুন্নেসা বেগম ২ মেয়ে, ২ মেয়ের জামাই, ৫ পুত্র, ৫ পুত্র বধু এবং ১৫ জন নাতি-নাতনী, অসংখ্য আত্মীয়স্বজন এবং হাজারো হাজারো ভক্ত ও অনুসারী রেখে গেছেন। অধ্যাপক মো: ইউনুস শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ও কৃতি ছাত্র ছিলেন। তিনি গোপীনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীপুর ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও বুড়িচং জুনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করেন। তিনি প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকে কৃতিত্বের সাথে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে পুর্ব বাংলার একমাত্র ঢাকা বোর্ডে কুমিল্লা হোচ্ছামিয়া বাই মাদ্রাসা থেকে মেট্রিক্যুলেশন পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকায় কৃতিত্বের সাথে ১২তম স্থান অধিকার করেন। তারপর শতবর্শী ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ হতে ১৯৬২ সনে আইএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্থ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ থেকে বিএসসিতে (সন্মান) গনিতে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তিনি ১৯৬৭ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফলিত গণিতে মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেনীতে এমএসসি পাশ করেন। অধ্যাপক মো: ইউনুস এর রয়েছে সুদীর্ঘ ৬০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা যা কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকার জন্য একটি মাইলফলক। তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন, এবং ১৯৬৯ সালের গনআন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভুমিকা রাখেন, যা যুগে যুগে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আগামী প্রজন্মকে উজ্জিবীত করবে। তিনি ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ স্টুডেন্ট লীগ এর সক্রিয় সদস্য হিসাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এইসময় তিনি পুর্ব পাকিস্তানের যুগপোযুগী শিক্ষা নীতি প্রনয়ন ও কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আন্দোলন করেছেন। তিনি ১৯৬৫-৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। তিনি শহীদউল্লাহ হল (ঢাকা হল) শাখার ছাত্রলীগের নির্বাচিত সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও ডাকসুর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। তিনি পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সক্রিয় সদস্য হিসাবে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা এবং ১৯৬৮ সালের ১১ দফা আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক ও জনতাকে সম্পৃক্ত করতে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশ রক্ষায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। যার কারনে পাক হানাদার বাহিনী বুড়িচংএ সর্বপ্রথম উনার গ্রামের বাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং পরিবারের কাউকে না পেয়ে নিকটাত্মীয়দের উপর ব্যাপক দমননিপীড়ন করে এবং তাদেরকে ঘর ছাড়া করে। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে তদানীন্তন জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট আহাম্মদ আলী ও অধ্যাপক মো: খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে গঠিত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার ইস্টার্ন কমান্ড কাউন্সিল কতৃক পরিচালিত বক্সনগর ও পদ্মনগর ইয়ুথ ট্রেনিং ক্যাম্পের ডেপুটি-ইন-চার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত তিনি ও অধ্যক্ষ আ: রউফ বাংলার মুক্তিকামী ছাত্র ও যুবকদের প্রাথমিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্হা করেন। তিনি বাংলাদেশের সীমান্তে টহলরত ও ব্যাংকারে আশ্রিত হানাদার পাক বাহিনীর উপর ২নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন দিদারুল আলম ও ক্যাপ্টেন হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী কতৃক পরিচালিত সাড়াশী অভিযানে সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগীতার জন্য ক্যাম্পের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত যুবকদের নিয়োজিত করেন। অধ্যাপক মো. ইউনুস পদ্মনগর শরণার্থী রিশিপশন ক্যাম্পেরও ডেপুটি ইন চার্জ ছিলেন। ভারতে স্থাপিত শরণার্থী ক্যাম্পের মধ্যে অন্যতম ছিল এটি। তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি দেয়া হাজার হাজার শরণার্থীদের রিশিপশন এবং ক্যাম্পে পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ইউনুস ছিলেন স্বাধীনতাত্তোর বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রুপকার। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আজীবন এলাকার উন্নয়নে ও মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন। তিনি চার (৪) বারের সংসদ সদস্য ছিলেন বটে। কিন্তু তিনি দায়িত্বপালন করেছেন মাত্র ১১ থেকে ১১.৫ বছরের মতো। এই সময়ে সম্পুর্ণ প্রচার বিমুখ এই নেতা রাজনীতিকে জনসেবার সোপান হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। তিনি নিজের কিংবা স্ত্রীর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন নাই। তিনি তার পুত্র-কন্যা কাউকে রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেন নাই এবং তাদের কাউকে ব্যবসা বানিজ্য ও অবৈধ উপার্জনের সুযোগ করে দেন নাই। তিনি সন্তান, আত্মীয়স্বজন ও দলীয় নেতা কর্মীদের কাউকে টেন্ডারবাজী ও দুর্নীতি করতে প্রশ্রয় দেন নাই। তিনি কোনদিনও সরকারী কাজে নিয়োজিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে কারোর জন্য অন্যায় ও অবৈধ আবদার নিয়ে যেতেন না কিংবা সুপারিশ করতেন না। তিনি কারো কোন উপকার করতে না পারলেও উনার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি হয়েছে এই কথা কেউ বলতে পারবেন না। অধ্যাপক ইউনুস ছিলেন তীক্ষ্ণ মেমোরির অধিকারী। তিনি বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়ার ১৭টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের হাজারো হাজারো মানুষের নাম ও পরিচয় জানতেন। তিনি দিনের ২৪ ঘন্টাই তার ব্যক্তিগত ফোন খোলা রাখতেন এবং মানুষের ফোন রিসিভ করে তাদের সুখ দু:খের কথা শুনে সম্ভব সবরকমের সাহায্য ও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। অধ্যাপক ইউনুস ছিলেন কুমিল্লা-৫ রাজনীতির মুকুটবিহীন রাখাল রাজা। তিনি ছিলেন বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়ার রাজনীতির এক মৃত্যুন্জয়ী মহানায়ক। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তারপরও তিনি দমে যাননি। সামনে থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জনগনের সেবা করেছেন। তিনি দল, মত ও পথের উর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কাজ করেছেন। সম্পুর্ন নিরঅংহকারী উনার সুন্দর ব্যবহার, নীতি ও নৈতিকতা এবং উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে জনগনের মনের মনিকোঠায় চিরস্হায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়ার সকল দল, মত, পথ ও পেশার মানুষের কাছে সর্বগ্রহনযোগ্য, সর্বজন নন্দিত, সমাদৃত ও সন্মানিত ব্যক্তিত্ব। তার বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন, আদর্শ ও নীতি নৈতিকতা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে যুগে যুগে শিক্ষনীয় ও পথিকৃত হয়ে থাকবে। তিনি নিজের কর্মগুনে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন। “গত একবছরে অধ্যাপক মো. ইউনুস ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ড ও সমাজকল্যাণ প্রকল্প সমুহঃ ১) গত রোজার ঈদে বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়ার দুই উপজেলায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরন ২) ৩টি পরিবারের বিদেশগামী যুবকদের নগদ অর্থ সহায়তা দান ৩) অসুস্থ ও দুঃস্হ ৩টি পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান ৪) বুড়িচং এ একটি মসজিদে এসি ক্রয়ের জন্য অর্থ প্রদান ৫) বুড়িচং উপজেলায় একজন ছাত্রী ও ব্রাক্ষণপাড়ায় একজন ছাত্রীর অধ্যাপক মো. ইউনুস ফাউন্ডেশনের উপবৃত্তির আওতায় পরীক্ষার ফি প্রদান ৬) বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ১ টি পরিবারকে ঘর বানানোর জন্য ঢেউ টিন প্রদান ৭) ষোলনল ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া গ্রামের ১জন অটো রিক্সা ড্রাইভারের আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর নির্মানের জন্য ঢেউ টিন প্রদান। ৮) গ্রামের নিজ বাড়ীর মসজিদে ফ্যান ও কার্পেট বিতরন ৯) শিবরামপুর মসজিদে অর্থ প্রদান ১০) আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পীরযাত্রীপুর কলেজে একটি স্টীলের আলমারী ও ছাত্রীদের কমনরুমের জন্য ২টি ফ্যান প্রদান ১১) পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের ২০০ দুস্হপরিবারকে ফ্রি চিকিৎসা প্রদান ১২) ৪ টি পরিবারের বিদেশগামী যুবকদের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান ১৩) তিনজন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীকে কলেজে ভর্তির জন্য নগদ অর্থ প্রদান ১৪) একজন অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ১৫) ফাউন্ডেশনের একজন প্রয়াত নেতার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ১৬) একজন দরিদ্র নারীর চোখের অপারেশনের জন্য আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করা হয়। এছাড়া অধ্যাপক মোঃ ইউনুস ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সকল অনুষ্ঠান যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে এবং তা চলমান আছে।

  • বুড়িচং