নেকবর হোসেনঃ
ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে পবিত্র নগরী মক্কায় যাওয়ার পথে সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ বাংলাদেশি রয়েছেন। ওই আটজনের মধ্যে তিনজন কুমিল্লার। তারা হলেন- জেলার মুরাদনগরের মামুন, রাসেল মোল্লা ও দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার এলাকার গিয়াস হামিদ।
মামুনের বাড়ি মুরাদনগরের মোস্তাপুর গ্রামে। সৌদি আরবে ২২ বছর বয়সী এ যুবকের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন তার বাড়িতে।
বাড়িতে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল তেমন কথা বলছেন না। মা মমতাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। মোবাইলে ছবি দেখে বুক চাপড়াতে দেখা যায় তাকে।
আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ছয় মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন।
নিহত মামুনের মামী তাসলিমা বেগম জানান, মামুন, তার মামা ইয়ার হোসেন এবং মামুনের ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম বাসে করে ওমরাহ করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। পথে তারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।
তাসলিমা আরও জানান, মামুন ও স্বজনদের বহন করা বাসটি ব্রেকফেল করে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে এতে আগুন ধরে যায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হতে পারেননি, আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়।
এ দুর্ঘটনায় মামুনের মামা ইয়ার হোসেন ও ভাগ্নে জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল জানান, অন্তত ৯ মাস আগে মামুন ভিসার জন্য আবেদন করেন। বয়স কম হওয়ায় সে আবেদন বাদ দেয়া হয়। পরে ৬ মাস আগে ফের আবেদন করেন মামুন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদিতে আরবে পাঠানো হয়। পুরো টাকা আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করা।
তিনি বলেন, সৌদিতে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা খবর পাই রাত ১টার দিকে। আমার নাতি জাহিদ ফোন করে বলে নানা, মামুন মামা তো নাই। সে ওমরাহ করার আগে আমাদের জন্য দোয়া করবে বলে যায়।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, ‘আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করব।’
কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করব।’
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানায়, দুর্ঘটনাস্থলটি জেদ্দা থেকে আনুমানিক ৬০০ কিলোমিটার দূরে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন।
সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের আবহা জেলায় ৪৭ যাত্রী নিয়ে একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। যাত্রীদের মধ্যে ৩৫ বাংলাদেশি ছিলেন।