‘খসরু ভাইয়ের ছেলে বলে কথা’ আবদুল মুনেম ওয়াসিফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেলো নির্বাচিত

লেখক: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি পিবডি মিউজিয়াম অফ আর্কিওলজি এন্ড এথনোলজির রবার্ট গাডনার ফেলো নির্বাচিত হলেন সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মরহুম জননেতা অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ভাইয়ের একমাত্র ছেলে আবদুল মুনেম ওয়াসিফ।আমি যতটা জানি, ওযাসিফ একজন প্রচারবিমুখ, অন্তর্মুখী ও আন্তর্জাতিক মানের সৌখিন ফটোগ্রাফার। তার এই অর্জনটি বাংলাদেশের ফটোগ্রাফির ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। তার এই অর্জনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান।তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আবদুল মুনেম ওয়াসিফের এমন বিরল অর্জনে আমি আনন্দিত ও মুগ্ধ।তাকে অভিনন্দন ও তার কল্যাণ কামনা করি।তিনি বলেন, তার বাবা আমাদের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসেবে সারা বাংলাদেশের নেতা ছিলেন।আমরা যেমন তার বাবার জন্য গর্বিত, এই মুহূর্তে তার অভিভাবক হিসেবেও আমি গর্বিত। মরহুম অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপির যে বিশাল ব্যক্তিত্ব, তার সাথে ছেলের তুলনা চলে না।তবে বাবার মেধার যে উত্তরাধিকার, সেটার কারণে পুত্র আবদুল মুনেম ওয়াসিফ বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার, মিডিয়া আর্টিস্ট, কিউরেটর অর্থাৎ সংগ্রাহক এবং শিক্ষক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার ড. শহিদুল আলমের প্রতিষ্ঠিত “পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে” (চধঃযংযধষধ ঝড়ঁঃয অংরধহ গবফরধ ওহংঃরঃঁঃব) ফটোগ্রাফির উপর শিক্ষকতা করছেন ওয়াসিফ। আর তার জন্য আমাদের বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষের হৃদয়ে অনেক ভালোবাসা ও অনেক গর্ব। মুনেম ওয়াসিফ ১১ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুরে। ওয়াসিফের কর্ম নিয়ে বলা যায়, ভারত বাংলাদেশের সীমান্তের বৈচিত্র হারিয়ে যাওয়া বীজ ও পাটকলকে এক সুতায় গেঁথেছেন মুনেম ওয়াসিফ তার প্রদর্শনী-“জমিন ও জবান”-এ। যেখানে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জমিনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে, তার আগ্রহের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলো-পুরান ঢাকাকে নিয়ে। কারণ তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ওখানেই। পুরান ঢাকা নিয়ে তার দীর্ঘ গবেষণামূলক কাজগুলোর একটি প্রদর্শনী হয়েছে ভারতের মুম্বাইয়ে। পরে ঢাকায় এবং ফ্রান্সে পাটকল নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেন। জাদুবাস্তবতা, সাহিত্য ও পুরান ঢাকার নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের মিশেলে এক স্বপ্নময় দৃশ্য চিত্রায়ন করেছেন ওয়াসিফ। মার্কিন দূতাবাস ঢাকা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশী আলোকচিত্রী, মিশ্র মাধ্যমের চিত্রশিল্পী, কিউরটর ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি পিবডি মিউজিয়াম অফ আর্কিওলজি এন্ড এথনোলজি কর্তৃক আলোকচিত্রে রবার্ট গাডনার ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।এই ফেলোশিপের আওতায় মুনেম তার-“নীল”শীর্ষক প্রকল্পের কাজ করবেন। ওয়াসিফ বাংলার নীল চাষের কুটিল ইতিহাসকে বহুমাত্রিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত দক্ষতা ও মুন্সিয়ানার সাথে। ওয়াসিফের অন্যান্য অর্জন : মুনেম ওয়াসিফ ২০০৩ সাল থেকে এজেন্সি ভের প্রতিনিধি, এখন পাঠশালা দক্ষিণ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমিতে ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির শিক্ষক। ২০০৭ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জোপ সোয়ার্ট মাস্টারক্লাসের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন । ২০০৮ সালে, তিনি ভিসা ড্রড সি’র সিটি অফ পার্পিগানান ইয়ং রিপোর্টারস অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। সে বছর তিনি সম্পর্কিত ফটোগ্রাফির জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ফেব্রিকা পুরষ্কারে অনূর্ধ্ব -২০ এর জন্য এফ ২৫ জিতেছিলেন। পরের বছর তিনি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের পানি সঙ্কট নিয়ে কাজ করার জন্য প্রিক্স পিকেট কমিশন থেকে ভূষিত হন। তার কর্ম বিশ্বজুড়ে প্রদর্শিত হয়েছে, মুসিয়ে দে ল্যালিসি, এবং সুইজারল্যান্ডের ফোটোমসিয়াম উইন্টারথার, ইরানের ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি দ্বিবার্ষিকী, জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন যাদুঘর, কুনস্টাল যাদুঘর এবং নর্ডারলিচত উৎসব নেদারল্যান্ডসে, কম্বোডিয়ায় অ্যাংকার ফটো উৎসব, লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল গ্যালারী, প্যালিস ডি টোকিও, ভিসা ফ্রান্সে ভিজার এবং বাংলাদেশের ছবি মেলা। ওয়াসিফের ফটোগুলি লে ম্যান্ডে ২, সানডে টাইমস ম্যাগাজিন, দ্য গার্ডিয়ান, পলিটিকেন, আইও ডোনা, মেরে, ডু, ডেজস জাপান, ল স্প্রেসো, লিবারেশন, কুরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ছবি, ফটোগ্রাফির ব্রিটিশ জার্নাল, লেন্সক্ল্যাচারে প্রকাশিত হয়েছে, ফটো জেলা নিউজ এবং জোনজারো পাঠশালা থেকে স্নাতক শেষ করার পরে ওয়াসিফ বাংলাদেশের ডেইলি স্টার সংবাদপত্রের ফিচার ফটোগ্রাফার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। আমরা চাই আমাদের ওয়াসিফ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বা পাবলো পিকাসো বা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বা কম করে হলেও পটুয়া কামরুল হাসানের মত ভুবনবিখ্যাত চিত্রশিল্পী হয়ে আমাদের মুখ উজ্জল করুক। মহান আল্লাহ খসরু ভাইকে পরকালীন শান্তি দান করুন। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক ইনকিলাব, ঢাকা ও প্রচার সম্পাদক, বুড়িচং উপজেলা সমিতি, ঢাকা।

  • কুমিল্লা