দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাঢোল বাজতে শুরু করেছে। এরই আলোকে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন প্রার্থীরা ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে পোষ্টার-ব্যানার লাগাচ্ছে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের সরগম ততই বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি নির্বাচন অফিসের দায়িত্বে সকল স্থানীয় নির্বাচন বাস্তবায়ন করা হয়। নির্বাচন ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় কাজ নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়। দেশের নাগরিকদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২২ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র কাজে লাগবে। আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পাওয়া, শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলা, ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স করা, পাসপোর্ট করা ও নবায়ন, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, চাকরির আবেদন, বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ, ব্যাংকঋণ, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের সংযোগ, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, টেলিফোন ও মোবাইলের সংযোগ, সরকারি ভর্তুকি, সাহায্য ও সহায়তা, ই-টিকেটিং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, আসামি ও অপরাধী শনাক্তকরণ, বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর পাওয়া ও সিকিউরড ওয়েব লগে ইন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে। তবে আইনগতভাবে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়ের নম্বর এখনো বাধ্যতামূলক করা হয়নি। একই অফিসের মাধ্যমে একদিকে নির্বাচন বাস্তবায়নের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা এবং অপর দিকে নতুন নতুন ভোটারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ সম্পাদন করতে হয়। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়া এই কাজগুলো সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং নতুন কার্ড মুদ্রনে মাঠ পর্যায়ে প্রথমে কাজটি করতে হয় উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে। উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ক্রমান্বয়ে জেলা ও আঞ্চলিক অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) বিভাগের মাধ্যমে পুরো কাজের প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত হয়। সর্বপরি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, নতুন মুদ্রন এবং নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নির্বাচন অফিসে দায়িত্ব পালন করছে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা। এতে সেবা গ্রহিতারা হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সপ্তাহের প্রত্যেকদিন নির্বাচন কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় সেবা নিতে আসা লোকজন সময় মতো তাদের কাজগুলো শেষ করতে পারে না। দূর দুরান্ত থেকে সেবা গ্রহিতারা অফিসে এসে ফিরে যেতে হয়। কোন কোন সময় অফিসারের জন্য সারা দিন বসে থেকেও কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া নির্বাচন অফিসে প্রতিদিন শতশত মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্রের কোন না কোন কাজে আসে। এতে সার্বক্ষণিক নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসে না থাকায় জনসাধারনকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাছাড়া কর্মকর্তা না থাকায় লোকজন হয়রানী হবার অভিযোগ রয়েছে। সচেতন মহল মনে করেন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন, নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রন এবং স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা না থাকায় সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা দিয়ে দুই কিংবা তিন উপজেলার কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও অনেক কষ্টের স্বীকার হচ্ছেন। তাই সঠিক ভাবে এবং যথা সময়ে কাজ সম্পাদনের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তা যথা সময়ে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। যেসব উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে, নতুন নিয়োগের মাধ্যমে দ্রæত খালি পদগুলো পুরন করা প্রয়োজন। এতে জনসাধারনের ভোগান্তির লাঘব হবে। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার উপর যখন যেই দায়িত্ব অর্পন করেন, তখন সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করাই আমার কর্তব্য। আমি আমার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলার মানুষদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।