নির্বাচনে সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

দেশের সব ধরনের নির্বাচনে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। ফলে নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না গণমাধ্যমকর্মীরা।
এছাড়া কোনো নির্দেশনা প্রতিপালন না করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার (১২ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হকের জারি করা নীতিমালা থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিক সংখ্যক গাড়ির স্টিকার দেওয়া হবে। তবে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের জন্য গাড়ির স্টিকার দেওয়া হলে তার ক্রমিক নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে।
নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালায় এমন বিধান আনলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকদের অন্যতম বাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল, যা ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ করাই প্রায় অসম্ভব।
এমন যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাংবাদিকরা নির্বাচনে তাদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের ওপর বাধা না দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই আগের কমিশনের পথ অনুসরণ করে একেবারে আইন করেই গণমাধ্যমের প্রতি এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচয়পত্র, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকারসহ অন্য নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময় সাংবাদিকদের বিষয়ে নির্দেশনাসমূহ প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকদের জন্য কার্ডের নমুনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের সরবরাহ করতে হবে। নির্দেশনাসমূহ যেসব সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে তাদেরও জানাতে হবে।
নীতিমালায় সাংবাদিক বলতে ডিক্লারেশনপ্রাপ্ত ও নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেল, যা বাংলাদেশ থেকে প্রচারিত হয়, অনুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অনুমোদিত ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক (তথ্য অধিদপ্তরের সাংবাদিক পাসধারী), আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায় (তথ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত) কর্মরত সাংবাদিক এবং বিদেশি সাংবাদিকদের (তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আগত সাংবাদিক) বোঝানো হয়েছে।
অনুমোদন প্রক্রিয়া
রাজধানীকেন্দ্রিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব সাংবাদিকের পাস ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ অধিশাখা থেকে দেওয়া হয়। এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিক বলতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা, জেলা, উপজেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন, আইপিটিভির স্থানীয় প্রতিনিধিকে বোঝানো হয়। স্থানীয় পর্যায়ের এসব সাংবাদিকের কার্ড ও গাড়ির স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা তার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদান করবেন।
আবেদন প্রক্রিয়া

ভোটগ্রহণের দিনের অন্তত তিনদিন আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিসিয়াল প্যাডে নিউজ এডিটর, চিফ রিপোর্টার, বার্তাপ্রধান, ব্যুরোপ্রধান, জেলা প্রতিনিধির সই করা আবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন সাংবাদিককে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলো তাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়পত্র/পিআইডির কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজের রঙিন ছবি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের পালনীয় নির্দেশাবলি

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপনকক্ষের ভেতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না।
একইসঙ্গে দুইয়ের অধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি সময় ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না, ভোটক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না, ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন। তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
এছাড়া ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না। কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশনা মেনে চলবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, কোনো ধরনের নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, এসব নির্দেশনা কোনো সাংবাদিক পালন না করলে কার্ড ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তার সাংবাদিক পাস বাতিল করতে পারবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ নীতিমালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন এবং উপ-নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে।

  • বাংলাদেশ