‘শিশু শ্রম ও শিশু শ্রমিকের উপর নির্যাতন’ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় বেড়ে চলছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

Spread the love

করোনা মহামারীর পর থেকে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়া এবং দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতির ফলে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সেই সাথে বেড়েছে শিশু শ্রমিকের উপর অমানবিক নির্যাতন। সেই সাথে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চা দোকান, মুদি দোকান, ওয়ার্কসপ এবং ব্রিক ফিল্ডে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে এলিট শ্রেণীর মানুষ কেউ ভালো নেই। প্রতিদিনই কোন না কোন অজুহাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। গ্রাম গঞ্জের সাধারণ মানুষ নিত্যদিনের চাহিদা মিটাতে গিয়ে অল্প বয়সের শিশুদেরকে কোন না কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে দিচ্ছে। যেই বয়সে হাতে থাকার কথা বই খাতা কিন্ত সেই বয়সে তাদের হাতে উঠছে চায়ের কাপ, হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবার সরবরাহ করার সামগ্রী এবং শ্রমিকের কাজ করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ওয়ার্কশপের হেলপার, হোন্ডা মেকানিক্স দোকানের হেলপার হিসেবে কাজ করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। যদিও সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কিন্ত সকলের ভাগ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিকের গন্ডি পার হওয়ার আগেই সংসারে চাহিদা মেটাতে উপার্জনের জন্য কাজে যোগদান করতে হচ্ছে অনেক শিশুকে। তাছাড়া বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন অটোরিক্সা ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ডে দেখতে পাওয়া যায় অদক্ষ শিশুদের ড্রাইভারের আসনে বসে থাকতে। জীবন সর্ম্পকে তাদের প্রকৃত কোন ধারণা থাক বা না থাক কিন্ত টাকা উপার্জনের ধারণাটা পরিপুর্ণ ভাবেই রপ্ত করেছে। যার ফলে কোন নিয়ম কানুন না মেনেই ঝুঁকিপুর্ণ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ থেকে ঝড়ে পড়া শিশুরা অর্থ উপার্জনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সাথে সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন নেশা দ্রব্যের সাথে এবং সেই নেশার টাকা সংগ্রহ করতে চুরি ছিনতাইয়ের মতো কাজের সাথে জড়িত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে সামাজিক সম্প্রতির বিঘœতা ঘটছে এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকদের অবহেলা এবং অসচেতনতার কারণে শিক্ষাঙ্গণ থেকে ঝড়ে পড়া শিশুদের একটি অংশ কিশোর গ্যাংয়ের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পূর্বে বুড়িচং থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় জগতপুর গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের ছেলেকে নেশা জাতীয় টেবলেটসহ আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। অপর দিকে বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এলাকার বিভিন্ন ফাঁড়ি রোডের মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় মোটর সাইকেল নিয়ে ভীর জমায়। নাম না প্রকাশে এক চা দোকানের শিশু শ্রমিক বলেন, অল্প বয়সে বাবা মারা যায়। মায়ের পক্ষে আমাদের সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই একান্ত বাধ্য হয়েই স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে সকালে চা দোকানের কাজে যেতে হয়। বুড়িচং বাজারের এক হোটেলের শিশু শ্রমিক বলেন, লেখাপড়া করার ভাগ্য আমাদের কপালে নেই। আল্লায় আমাদের কপালে শ্রমিকের কাজ করার জন্যই মনে হয় সৃষ্টি করেছেন। তাই এতে মনে কোন কষ্ট নেই। সচেতনমহল মনে করেন- অল্প বয়সে শিশুদেরকে শিক্ষার কার্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে বিভিন্ন কাজ কর্মে সম্পৃক্ত করার ফলে শিশুরা অনায়াসে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে উঠতি বয়সি শিশুরা জড়িয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। সঠিক তদারকির মাধ্যমে পথশিশু এবং শিশু শ্রমিকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় দিনে দিনে শিশু অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। শিশু শ্রম বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঠিক তদারকি করতে হবে এবং পথ শিশুদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দুই উপজেলার অনেক অপরাধমূলক কার্যক্রম কমে যাবে। শ্রমিকের উপর নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের তদারকি না থাকায় শিশু শ্রমিকের উপর অমানবিক নির্যাতনের মাত্রা। সম্প্রতি বুড়িচং উপজেলা সদর বাজারের জামাল মটরস এর মালিক হোন্ডা মেকানিক্স জামাল হোসেন তার দোকানের শিশু শ্রমিক রাকিবুল কে হোন্ডার ক্যাবল তার দিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। তার একটি হাত ভেঙ্গে ফেলেছে। রাকিবুল বর্তমানে বুড়িচং সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রাকিবুল ও তার পরিবার সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এভাবে প্রতিনয়তই শিশু শ্রমিকের উপর অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে। শিশু শ্রম ও শিশু শ্রমিকের উপর নির্যাতন বন্ধ হয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া