১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংস্করণ:
রাতের আধারে ইউনিয়ন পরিষদের পাহারাদার এক গ্রাম পুলিশের সহায়তায় অভিনব প্রন্থায় কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক চুরি ও ইউনিয়ন পরিষদের সকল তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে ইমন নামে এক ডিজিটাল প্রতারকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান রিপন ভূইয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং ঐ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৫ নং দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান রিপন ভূইয়া বলেন, গত ২৪ শে আগস্ট বৃহস্পতিবার পরিষদের কাজ শেষ করে বিকালে বাসায় চলে যাই। পরে দুইদিন সরকারি ছুটি থাকায় রবিবার দিন ২৭ শে আগস্ট অফিসের কম্পিউটার অপারেটর জানায় কম্পিউটার চালু হচ্ছে না। তাই ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মুন্নাকে আনার পরে আমরা জানতে পারি যে এটার হার্ড ডিস্ক পাল্টানো হয়েছে। এরপর সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং কম্পিউটার অপারেটর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করে। পর দিন ২৮শে আগস্ট আমি নিজে বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করি। একই দিনে দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বাকী গ্রাম পুলিশগন ঘটনার রাতে পরিষদ পাহাড়ায় থাকা এনামুল হককে দায়ী করে লিখিত অভিযোগ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। এনামুল গ্রাম পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাধ করলে ওঠে আসে হার্ড ডিস্ক চুরির মূল হোতা ইমনের নাম। উপজেলার বেজুরা গ্রামের মোঃ সিদ্দিক মিয়ার ছেলে ইমন (২৮)। সে ২০২১- ২০২২ এ এক বছরের ইউনিয়ন পরিষদে অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর দায়িত্বে ছিল। এ থেকে শুরু হয় তার জালজালিয়াতীর হাতি খড়ি। তারপর থেকে ভূয়া জন্মসনদ, ভূয়া মৃত্যু সনদ, বানিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিষয়ে অনেক অভিযোগ পাই। তা প্রমানিত পেয়ে তাকে পরিষদে থেকে তাকে বের করে দেই। তার পর থেকে এলাকার কিছু খারাপ প্রকৃতির মানুষের সাথে মিশে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য চুরির মিশনে নামে সে। চুরির সাথে ছিল আমার পরিষদের গ্রাম পুলিশ বেজুরা গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে এনামুল হক ভূইয়া। যা ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়েছে। এই চুরির সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট। এবং গ্রাম পুলিশ এনামুল হক ভূইয়া আর ইমনকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পরিষদের গ্রাম পুলিশ মোঃ নজির আহাম্মদ, মোঃ শাহ জাহান, মোঃ তনু মিয়া, কামরুল ইসলাম জানায় এনামুল এলাকার সকল প্রকার চুরি, মাদক প্রচার, গরু চুরির সাথে জড়িত। ঘটনার রাতে এনামুল হক পরিষদ পাহাড়ায় থাকা অবস্থায় চুরি হয়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সকল গ্রাম পুলিশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলাকার স্থানীয়রা জানান, ইমন কম্পিউটারে ভালো দক্ষ রয়েছে। ইমন এটা কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আত্মসাত করেছে। তাছাড়া ইয়াবা, সেবন, বিক্রি, ভূয়া সনদ, কাগজপত্র সব কিছু তৈরি করতে পারে সে। টাকার বিনিময়ে ইমন যে কোন কাগজ তৈরি করতে পারে এটা পরিষদের বা মন্ত্রনালয়ের। এবিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ এনামুল হক ভূইয়া বলেন, ঘটনার রাতে ইমন তার এক বন্ধু নিয়ে পরিষদে এসে আমাকে ডাকা ডাকি করে। পরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বলে আমাদের ঠান্ডা এবং সিগারেট খাওয়াও। পরে আমি দোকানে যাই। তারপরে ১০ মিনিট পরে চলে যায় তারা। ইমন আমার এত বড় ক্ষতি করবে আমি বুঝতে পারি নাই। এখন আমি লজ্জায় এলাকাতে যেতে পারি না। অভিযুক্ত প্রতারক ইমনকে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি, তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তবে তার বড় ভাই কম্পিউটার অপারেটর মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তবে বিষয়টি সামাজিক ভাবে শেষ করার চেষ্টা চলছে। পরিষদের কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক চুরির বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক চুরির বিষয়ে একটি অভিযোগ পাই। অভিযোগের সূত্র ধরে ইমন নামে একজনকে সন্দেহ হলে থানায় ডেকে আনা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এর একপর্যায়ে চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। চুরি হওয়া কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কটি তার কাছ থেকে উদ্বার করি। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কটি পরিষদের কি না এটা। তার বিষয়ে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা তাকে নজরে রাখছি। বিষয়টি তদন্ত করছি। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স.ম আজহারুল ইসলাম বলেন, দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চুরির ঘটনায় আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ কাউছার হামিদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
