ব্রাহ্মণপাড়ায় আগের মতো ঢেঁকির শব্দে আর জেগে ওঠে না পাড়া

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

Spread the love

‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’ এরকম প্রবাদ থাকলেও আধুনিক যুগে এসে ধান ভানার যন্ত্রের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম সেই কাঠের তৈরি ঢেঁকি। একসময় এই অঞ্চলের মানুষের ধান ভানা ও বিভিন্ন পিঠাপুলির জন্য চাল গুঁড়ো করার একমাত্র উপায় ছিল কাঠের তৈরি ঢেঁকি। যা এখন আর সচরাচর চোখেই পড়ে না। সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক কলের কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি কেবলই বই-পুস্তকের শব্দ। আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষে সময় ও শ্রম কমাতে আবিষ্কৃত হচ্ছে নানা যন্ত্র, যার ফলে ঢেঁকির মতো গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রাচীনতম অনেক ঐতিহ্য দিনে দিনে বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে। তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় বহু আগেই এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে— তব রাজপথে চলিছে মোটর সাগরে জাহাজ চলে/ রেলপথে চলে রেল ইঞ্জিন দেশ ছেয়ে গেছে কলে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই জনপদের মানুষের ধান ভানার চাহিদা মেটাতে ঢেঁকি একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়াও পৌষ-মাঘে নানারকম পিঠা পুলি তৈরির জন্য চালের গুঁড়ো করতে ঢেঁকির বিকল্প ছিল না। বিশেষ করে শীত মৌসুমে মানুষজন ঘুমে থাকতেই শুনতে পেতেন ঢেঁকির ধুক্কুর ধুক শব্দ। ঢেঁকির এই শব্দ সেই সময়ের মানুষের কাছে ছিল একটি অতিপরিচিত শব্দ। এই শব্দ শুনেই বুঝতে পারতেন কোথাও পিঠাপুলির আয়োজন হচ্ছে, বা ধান ভানছে। আধুনিক সময়ে আবিষ্কৃত ধান ভানার যন্ত্রের কারণে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে বাঙালির ঐতিহ্য এই ঢেঁকি হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার দীর্ঘভূমি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার বাড়িতে একটি ঢেঁকি আছে যার বয়স আনুমানিক একশো’র বেশি বছর হবে। এটা আমার বাবা তৈরি করেছিলেন। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আমরা বাবার তৈরি ঢেঁকি সংরক্ষিত রেখেছি। পিঠা বানানোর জন্য চালের গুঁড়ো আমরা এখনও এই ঢেঁকি দিয়েই করে থাকি। তবে একসময় প্রায় বাড়িতেই ঢেঁকি থাকলেও এই আধুনিক যুগে এসে ঢেঁকি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলার মকিমপুর এলাকার শরাফত আলী বলেন, আমরা ছোট বেলায় দেখেছি আমাদের মা-চাচিরা কাঠের তৈরি ঢেঁকি দিয়ে ধান থেকে চাল বের করতেন। শীতের সময় বাবার বাড়ি ঝি-জামাই বেড়াতে আসতো। এ সময় ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করে নানারকম পিঠাপুলি তৈরি করা হতো। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন এসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যেও। এখন আর ঢেঁকি সচরাচর চোখে পড়ে না। কানে ভেসে আসে না ঢেঁকিঘরের শব্দ।

  • ব্রাহ্মণপাড়া