ব্রাহ্মণপাড়ার মাঠে মাঠে আমন সংগ্রহের হিড়িক

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ৯ মাস আগে

Spread the love

রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরি, চারা রোপন ও পরিচর্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ঘরে তোলার দিন এসেছে। মাঠেজুড়ে সোনালি ফসলের সমারোহ। পাকা ধান কাটার হিড়িক পড়েছে চতুর্দিকে। ঋতু পরিক্রমায় এখন হেমন্তকাল। এখন চলছে অগ্রহায়ণ মাস। এই মাস থেকেই হেমন্তের মাঠে মাঠে কৃষকের আমন ধান কাটা ও ঘরে তোলা, ধান মাড়াই ঝাড়াই সেদ্ধ শুকানোর মনোহর মহোৎসবের দৃশ্য চোখে পড়ে যত্রতত্র। এতেই যেন ফুটে ওঠে আবহমান বাংলার চিরচেনা রূপসী রূপ। এদিকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়ও আমনের নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ ভাসছে বাতাসে। আমন মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানে কৃষকের স্বপ্ন। পাকা ধান কেটে বাড়ি নিচ্ছেন কৃষক। ঘরে ঘরে ধান গাছ থেকে ধান সংগ্রহের প্রতিযোগিতা চলছে পুরোদমে। রাতভর চলছে ওই সংগৃহীত ধান সেদ্ধের কাজ। উঠোনে উঠোনে সেই ধান শুকিয়ে গোলা ভরছে কৃষক। এ যেন বাঙালি পরিচয়ের বিশেষণে ভরা হেমন্ত রূপ। আমন ধান সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ঋতু বৈচিত্র্যে হেমন্ত আসে শীতের আগেই। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্ত ঋতু। হেমন্তের এই সময় গ্রামীণ সমাজে নিয়ে আসে খুশির বার্তা। ঘরে ঘরে চলে নতুন ধান সংগ্রহের কাজ। এ মৌসুমে আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে ছিল, তাই আমনের ফলনও হয়েছে ভালো। এতে কৃষকও খুশি। উপজেলার মালাপাড়া এলাকার আমন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আমন চাষিদের পদচারনায় মুখরিত মাঠ। প্রতিযোগিতা দিয়ে চলছে আমন ধান ঘরে তোলার কাজ। ধান মাড়াই ঝাড়াই ও সেদ্ধ শুকানোর কাজে ব্যস্ত সবাই। এতে যেন এক নতুন আবহের সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন বাঙালির হাজার বছরের চিরচেনা রূপ। তাইতো বিপুল বিস্ময়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হেমন্তের অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন—- ‘ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা খেতে, আমি কি দেখেছি মধুর হাসি / সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ উপজেলার চান্দলা এলাকার চরের পাথর এলাকার কৃষক আয়াত আলী বলেন, এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার আমি ৩৯ শতক জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছিলাম। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মিথিলের কারণে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলন সন্তুষ্টজনক হয়েছে। আমন ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজে আমরা সপরিবারে ব্যস্ত সময় পার করছি। স্থানীয় কৃষক আমিরুল্লা বলেন, এবছর ফলন ভালো হয়েছে। আমি এবছর ৬০ শতক জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছিলাম। ধান কাটার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দিনের বেলায় মাঠে ধান কাটার কাজ করছি আর রাতে ধান গাছ থেকে ধান সংগ্রহের কাজ ও ধান সেদ্ধের কাজে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। চান্দলা মডেল হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক অপু খান চৌধুরী বলেন, অগ্রহায়নের শুরুতেই আমাদের গ্রাম বাংলায় চলে নতুন ধান কাটা আর আর সেই সাথে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ ছেয়ে যায় সোনালি রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন আনন্দে নেচে ওঠে। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ ভাগাভাগি হয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, ব্রাহ্মণপাড়ায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪২৯ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মনেও তৃপ্তি এসেছে। কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমরা আশা করছি কৃষক এবার ভালো দামও পাবেন।

  • ব্রাহ্মণপাড়া