‘ব্রাহ্মণপাড়ার গঙ্গানগর গ্রামে’ মাদক ব্যাবসায়ী সন্দেহে স্কুল ছাত্র আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলিতে আহত-৬

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কুমিল্লার ব্রা‏হ্মণপাড়ায় মাদক বিরোধী টাস্কফোর্স অভিযানে মাইন উদ্দিন নামে এক ছাত্র আটককে কেন্দ্র করে প্রশাসনের নির্দেশে বিজিবির এলোপাতাড়ি গুলিতে ৬ জন আহত হয়েছে। গত রবিবার রাতে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানায়, মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে মাইন উদ্দিন নামে এক ছাত্র কে আটক করে টাস্কফোর্স টিম। এ সময় এলাকাবাসী টাস্কফোর্স টিমকে অনুরোধ করে মাইন উদ্দিন একজন ছাত্র, সে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তখন টাস্কফোর্স টিম ও এলাকাবাসীর মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা প্রশাসন বিজিবিকে গুলি করার নির্দেশ দেয়। তখন বিজিবি ১৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে নারী, শ্রমিক ও অটো ড্রাইভারসহ ছয়জন আহত হয়। আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যপারে প্রশাসন, বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের গঙ্গানগর এলাকার ভারত সীমান্তের ২০৫৬ পিলার এলাকা থেকে গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানার নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাউসার হামিদ, বিজিবি, আনসার, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যৌথভাবে একটি মাদক বিরোধী ট্রাক্সফোর্স অভিযান চালায়। এ সময় গঙ্গানগর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাইন উদ্দিনকে মাদক ব্যাবসায়ী সন্দেহে আটক করে। তাকে নিয়ে উপজেলায় ফেরার পথে এলাকাবাসী টাস্কফোর্স টিমকে বাধা প্রদান করে। মাইন উদ্দিনকে কি কারণে আটক করা হয়েছে সে বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে চায়। তখন টাস্কফোর্স টিম ও এলাকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করে। এসময় এলাকাবাসী লাঠিছুটা ইটপাটকেল দিয়ে হামলা চালায়। এসময় দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) কাউছার হামিদের নির্দেশে বিজিবি সদস্যরা ১৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এ সময় বিজিবির ছুড়া গুলিতে নারী ও শ্রমিকসহ ছয়জন আহত হয়েছে। এবং পাশে থাকা মসজিদের জানালার কাচ ভেঙ্গে গুলি মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে। আহতরা হল- গঙ্গানগর গ্রামের অটোচালক রবিউল (২২), তানজিনা আক্তার (১৮), কুলসুম বেগম (৬০), রবিউল্লাহ (১৮) রেলওয়ের শ্রমিক সুমন মিয়া (৩০), সিরাজুল ইসলাম (৪৫)। আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজসহ আশ-পাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এব্যাপারে স্থানীয় আবু হানিফ, সেলিম ডাক্তার, ইব্রাহিম, বাদশা মিয়া, মানিকের মা রাবেয়া আক্তার, রবিউলের বাবা আবুল বাসারসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার দিন রাত সারে আটটার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাউসার হামিদ ও বিজিবির একটি দল গঙ্গানগর গ্রামে মাদক বিরোধী অভিযানে ঘুরাঘুরি করছিল। তখন আবুল হোসেনের ছেলে মাইন উদ্দিন প্রশাসনকে দেখে ভয়ে দৌড় দিলে প্রশাসন তাকে আটক করে। তখন আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে, প্রশাসন এলাকাবাসীর সাথে খারাপ আচরণ করে। তখন উত্তেজিত এলাকাবাসী প্রশাসনের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে। তখন টাস্কফোর্স টিমের প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বিজিবিকে গুলি ছুড়ার নির্দেশ প্রধান করে। তখন বিজিবি সদস্যরা ১৮ রাউন্ড এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এসময় পথচারী, শ্রমিক, নারী পুরুষসহ ৬ জন আহত হয়। এলাকাবাসী আরও জানায়, রাত দুইটা থেকে আড়াইটার পর আটককৃত মাইন উদ্দিনকে ছেড়ে দেয় প্রশাসন। এব্যাপারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাঃ শরিফ মজুমদার জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিরাজুল ইসলাম ও কুলসুম বেগম বুলেট ইনজুরি নিয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে সিরাজুল ইসলামকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা বলেন, মাদক বিরোধী টাস্কফোর্স অভিযানের সময় মাইনুদ্দিনকে ৫ পিচ ইয়াবাসহ আটক করা হয়। এ সময় তাকে নিয়ে ফেরার সময় মাদক ব্যাবসায়ীসহ ৬০/৭০ জন লোক তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ম্যাজিষ্ট্যাটের নির্দেশে বিজিবি ১৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল আশিক উল্লাহ ভুইয়া বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া ইউএনও’র নেতৃত্বে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মানিক মিয়া নামের এক জনকে আটক করা হয়। এ সময় পিছন থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা আক্রমন চালায়। ম্যাজিষ্ট্যাটের নির্দেশে বিজিবি ১৮ রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এব্যাপারে শালদানদী বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আলমগীর হোসেনের সাথে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ইউএনও এবং তার উর্ধতন কর্মকর্তা বিজিবির ৬০ ব্যাটেলিয়ন অধিনায়ক (সিও) মহোদয়ের সাথে কথা বলতে বলেন। এব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিজিবি বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৬০/৭০ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

  • ব্রাহ্মণপাড়া