বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় শ্রমজীবীদের পাশাপাশি কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আসক্ত হচ্ছে মোবাইলে জুয়া খেলায়

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

Spread the love

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষের প্রযুক্তিগত উন্নতি হলেও অবনতি কম হচ্ছে না। প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে যুবক সমাজ ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। শ্রমজীবিদের সাথে মোবাইলে লুডু, দাবা ও তাস খেলায় মত্ত হচ্ছে উঠতি বয়সি যুবক ও ছাত্ররা। এমন একটা সময় ছিল যখন কারো জুয়া খেলার ইচ্ছে জাগতো, তখন জুয়াড়ীরা এক নির্জন এলাকায় গিয়ে জুয়ার আসর বসাতো। এখন আস্তে আস্তে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জুয়ার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা লাগে না। দোকানে বা যে কোনো স্থানে ৬-৭জন মানুষ বসার সুযোগ থাকলেই শুরু হয়ে যায় জুয়া। যে জুয়ার থাবা থেকে বাদ পড়ছে না বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্ররাও। এই জুয়া খেলা ছাত্রদের কে অমনোযোগী করে তুলছে। প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে মেধা বিকাশ, ধ্বংস করে দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। মাদক যেমন মানুষকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ঠিক জুয়াড়ীরাও ছাত্রসমাজ ও যুব সমাজের ভবিষ্যৎ আঁধার করে দিতে অতিরিক্ত ভূমিকা রাখছে। জুয়া খেলা সাধারণ ভাবে মানুষের চোখে অপরাধ বলে বিবেচিত না হওয়ায়, আমাদের সন্তানরা সেটাতে সহজেই ঝুঁকছে। যে অপরাধটা স্বাভাবিকভাবে মানুষ অপরাধ মনে না করার কারণে দ্বিধাহীন ভাবে এমন কাজে জড়িত হচ্ছে হাজারো মানুষ। বিশেষ করে যুব সমাজ।আর এমন জুয়ারীরাই সমাজে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করছে না। জুয়ার আসরে একে অপরের সাথে কোন ধরণের মনোমালিন্য হলে হঠাৎ অস্ত্র হাতে নিতে বিন্দু মাত্রও চিন্তা করে না।এভাবেই দেশে সন্ত্রাসীদের সূত্রপাত হয় বলে মনে করছেন সমাজের গুনীজনরা। বর্তমান সময়ে সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী তৎপরতা উপলব্ধি করা যাচ্ছে। যেটা এক সময় তিলে তিলে দানা বেঁধে বিরাট বিস্ফারণে পরিণত হবে। দেখা যাচ্ছে, সেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেশির ভাগই লুডো জোয়ায় আসক্ত। মাদক এক ধরণের নেশা, যে নেশা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে কষ্ট হয়। জুয়া খেলার নেশাও মাদকের চেয়ে কম নয়। সেটা কিন্তু সমাজে মানুষ সহজেই বুঝতে পারছেন না। এই জুয়া যখন আস্তে আস্তে বিরাট বিস্ফোরণে পরিণত হয়, তখনি নাম পাল্টিয়ে “ক্যাসিনো” হয়। তখন প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা চালায়। কোনো বড় ঘটনা ঘটানোর আগে কিন্তু প্রশাসনের চোখে সেটা অপরাধ বলে সহজেই বিবেচিত হয় না। যার ফলে জুয়ারীরাই বোমায় পরিণত হওয়ার সুযোগ পায়। বিশেষ করে এই জুয়ার নেশা সৃষ্টির দুইটি ইন্ধন, এক লুডো, দ্বিতীয় ক্রিকেট, ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে পক্ষ- বিপক্ষ ভাগ হয়ে, যখনি বাজিতে মেতে ওঠে ঠিক সেই সময় থেকে সমাজ এবং ছাত্র সমাজকে জুয়ার নেশায় অভ্যস্ত করে গড়ে তুলে। যেকোন অপরাধ সূত্রপাত হওয়ার সময় ভেঙ্গে দেয়া না হলে, সেটা পরে গিয়ে সামাল দিতে অতি কষ্ট হয়ে যায়, তাও পরিপূর্ণভাবে সকল অপরাধীদের দমন করা সম্ভব হয়না বলে মন্তব্য করেন শিক্ষিত সমাজ ও সমাজের জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তিগণ। ছাত্র সমাজ ও যুব সমাজকে ভবিষ্যৎ অন্ধকার থেকে বাঁচাতে প্রত্যেক অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে জুয়ার আসরে প্রশাসনের জোরদার অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হলে এমন অপরাধ থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। আগামী প্রজন্মকে ভবিষ্যৎতে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিজ্ঞ মহল। পূর্ণমতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, উঠতি বয়সী যুবক ও স্কুল কলেজগামী ছাত্রদেরকে এখনই যদি মোবাইলে জুয়া খেলা থেকে ফেরত আনা না যায়, তাহলে একটি সময় বড় ধরনের জুয়ার সিন্ডিকেট তৈরী করে ফেলবে এবং বুড়িচং ব্রাহ্মপাড়া এলাকার ছাত্রসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ও পাড়া-মহল্লার আনাচে কানাচে ও চা দোকান থেকে জুয়ার আসরগুলো উচ্ছেদ করা। অন্যথায় এই এলাকায়ও কিশোর গ্যাং মাথাচারা দিয়ে উঠবে।

  • ব্রাহ্মণপাড়া