বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

Spread the love

শাপলা ফুলের আদলে তৈরি লোগো ব্যবহৃত হচ্ছে এ দেশের কিছু দপ্তরে, ফুলটির প্রতিফলন রয়েছে এ দেশের টাকা ও মুদ্রাতেও। কারণ, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এটি বাঙালি ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান ফুল। জাতীয় ফুল খ্যাত শাপলা একসময় গ্রামবাংলার খালে বিলে ঝিলে পুকুরের জলে নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাত শাপলা-শালুক ও ড্যাপ নামের ফুল। নিজেদের সৌন্দর্য মেলে ধরে ফুটে থাকত এ ফুল। কালের বিবর্তনে আর উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় ফুলটি আজ নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ, খাল দখল ও সংস্কারের অভাবে বর্ষাকালে ওই অঞ্চলে এখন আর তেমন পানি হয় না বলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় ফুল শাপলা, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এই জাতীয় ফুলটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের । জানা গেছে, শাপলা সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। হাওড়-বিল ও দিঘিতে এটি বেশি ফোটে। শাপলা ফুল রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটে। এরা দিনের বেলায় কিছুটা সঙ্কুচিত হয়। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এক ধরনের ফুল যার কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই বিলে ঝিলে জন্ম নেয়। সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে ফুলটি। শাপলা ফুল কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যার মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলাটি একসময় গ্রামবাংলায় অনেকেই সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। বহু ঔষধি গুণও রয়েছে এই শাপলায়। হজমের সমস্যায় এই শাপলা ফুল ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এই উদ্ভিদ উপকারী। অতিরিক্ত পিপাসা নিবারক ও আমাশা রোধে ব্যবহার করা হয় এই উদ্ভিদ। সাধারণত ঔষধের জন্য এই উদ্ভিদের ফুল ও বীজ ব্যবহার করা হয়। এই উদ্ভিদের বীজ খই হিসাবে ভেজে খাওয়া হয়। শাপলার ডাঁটা ইলিশ ও চিংড়ির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়া নারকেল বাটা দিয়ে শাপলার ঝোল খাওয়ার স্বাদই আলাদা। শাপলা ফুলের গোড়ায় জলের নীচে একপ্রকার আলুর মত কন্দ থাকে। যা রান্না করে খাওয়া যায়। একসময় গ্রাম বাংলায় এই ফুল বিভিন্ন জলাশয়ে বর্ষাকালে অহরহ দেখা যেত। আজ তা বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, একসময় এই জনপদে বর্ষা মৌসুমে শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। কালের বিবর্তনে ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। জাতীয় ফুল হিসেবে ফুলটিকে সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্কুল শিক্ষক আমির হোসেন বলেন, বর্তমান সভ্যতায় ছোঁয়ায় ফসলি জমি ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ, পুকুরখনন, জলাশয়ে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। যার কারণে শাপলা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় বর্ষাকালে এই অঞ্চলের ফসলি মাঠে পানি জমতো, আর ওই জমা পানিতে জন্মাতো নানা প্রজাতির শাপলা। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না এ দেশের জাতীয় ফুলটি। বিলুপ্ত প্রায় জাতীয় ফুলটি সম্মিলিতভাবে রক্ষা করার দায়িত্ব এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষের। কুমিল্লা জজ কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী এডভোকেট আবদুল আলীম খান বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা বিলুপ্তি রোধে পুকুরে ও জলাশয়ে শাপলা চাষ করতে হবে। এতে করে জাতীয় ফুল শাপলার প্রসার ঘটবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শঙ্খজিৎ সমাজপতি বলেন, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। এ ফুলের সাথে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। ফসলি মাঠে, ডোবা, পুকুর ও জলাশয়ে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার ও গ্রামীণ খালের নাব্যতা হারানোর কারণে জাতীয় ফুল শাপলা দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ ফুলের অস্তিত্ব ধরে রাখতে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) আইয়ুব মাহমুদ বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে তা ঠিক নয়, তবে কুমিল্লায় হাওয়র ও জলাশয় কম থাকায় তেমন একটা চোখে পয়ে না। জলাশয় এলাকায় শাপলা প্রচুর পরিমাণ দেখা যায় আমরাও চিন্তা করেছি কুমিল্লায় আমাদের পুকুরে নতুনভাবে শাপলার চাষ করবো।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া