বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার বাজারগুলোতে রোজায় দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার আহবান এলাকাবাসীর

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

Spread the love

আরবী ১২টি মাসের মধ্যে রোজার মাস হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। মুসলমানদের কাছে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মাসে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল হয়েছে। রমজান মাস আত্মশুদ্ধির মাস। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তার বান্দাদেরকে এই মাসে অনেক নেয়ামত দিয়েছেন। যারা রমজান মাসে খাছ নিয়তে সাওম পালন করতে পারে তারা ঈদুল ফিতরের দিন সদ্য ভূ-পৃষ্ট হওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তার জীবনের সকল পাপ রোজা বিনিময়ে মাপ করে দেন। তাই রোজার মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই মাসের গুরুত্ব আমরা মসজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে দেই। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তার গুরুত্ব আর মনে থাকে না। মানুষের প্রয়োজনে ধর্মের সৃষ্টি। কিন্ত ধর্মের প্রয়োজনে মানুষের সৃষ্টি হয় নাই। তাই ধর্মীয় বিধি বিধান যদি মানুষের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে না পারা যায়-তা হলে ধর্মের মূল সৌন্দর্য ফুটে উঠে না। প্রতিটি ধর্মের বিকাশ ঘটে তার ব্যবহার বিধির উপর। প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব কিছু ব্যবহার বিধি ও বিধিমালা রয়েছে। যা তাকে অন্যান্য ধর্ম থেকে পৃথক রাখতে সাহায্যে করে। কিন্ত বর্তমানে ধর্মের বিধি বিধান ও ব্যবহার বিধির কথা উপাশনালয়ের প্রাচীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কেউ তা আর বাহিজ্যিক জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে না। আমরা যে যে-ই ধর্মের অনুসারী হই না কেন-আমাদের মধ্যে সেই ধর্মের গুনাবলী এখন আর নেই। আমরা আমাদের প্রয়োজনে ধর্মের দোহাই দেই কিন্ত নিজের স্বার্থের পরিপন্থি কোন কাজ আসলে ধর্মের কথা ভুলে যাই। তখন নিজের স্বার্থহাসিল করার জন্য সর্বোচ্ছ চেষ্টা করি। তাতে ধর্মের বিধি বিধান লঙ্ঘন হলো কি হলো না, তা বিবেচ্য বিষয় হিসেবে থাকে না। তাই তো রোজার মাস আসলেই প্রত্যেকটি দ্রব্যের মূল্য হু-হু করে বাড়তে থাকে। যেখানে রোজার মাসকে কেন্দ্র করে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রোজার মাসের সম্মানে কবরের আযাব বন্ধ করে দেন। ইবলিশ শয়তানকে গ্রেফতার করে বন্ধি করে রাখেন। সেখানে আমরা মানুষ ছাড় দিতে পারি না। বরং কিভাবে মানুষকে আরো বেশি কষ্ট দেওয়া যায়। কিভাবে মানুষ ঠকিয়ে বেশি বেশি মুনাফা করা যায়-সেই দিকে বেশি চেষ্টা করি। রোজার মাসে ধনী গরীব সকল শ্রেনীর মানুষ ভালো মন্দ খাওয়ার চেষ্টা করে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে শুরু করে। কোন কোন ব্যবসায়ী ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পন্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা শুরু করে কিংবা গুদামজাত করতে থাকে, যেন ঈদুল ফিতরের সময় বেশি বেশি মূল্য আদায় করতে পারে। এই ব্যবসাকে ইসলাম কতটুকু সমর্থন করে। নিশ্চয় স্টক ব্যবসা ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্ত তবু আমরা যারা নিজেকে মুসলমান দাবী করি, তারা প্রতিনিয়তই স্টক ব্যবসা করে যাচ্ছি। পন্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দাম আদায় করছি। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি, রোজার মাসে যেন দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সহনশীল অবস্থায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেন। মজুদদার ও অতিরিক্ত মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি বাজারে মনিটরিং বৃদ্ধি করতে হবে। যেন কোন ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দাম পন্যদ্রব্য বিক্রয় না করতে পারে এবং গুদামজাত করতে না পারে। পৃথিবীর অন্যান্য ইসলামী দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, সে দেশের ব্যবসায়ীরা বছরের ১১ মাস ব্যবসায় লাভ করে আর রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেয়। যেন সাধারণ মানুষ সঠিক ভাবে রোজা পালন করতে পারে। কিন্ত আমাদের দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়-আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ১১মাস বসে থাকে রোজার মাস আসার জন্য। রোজার এক মাসে বাকি ১১মাসের লাভ করতে চায়। তাই দ্রব্যমূল্য হুহু করে বাড়তে থাকে। শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত পন্যদ্রব্যের বিশাল মূল্য ছাড় দেয়। কিন্ত আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে পন্যদ্রব্যের মূল ছাড় না দিয়ে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে থাকে। খ্রিষ্টান ধর্মের ব্যবসায়ীরাও তাদের ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে পন্যদ্রব্যের মূল্য অনেক কমিয়ে দেয়। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম আমাদের এই দেশে। যেখানে প্রায় শতকরা ৮৫ জন মুসলিম। মুসলিমের দেশে মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে পন্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পেতে আকাশচুম্বি হয়ে যায়। যদিও আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রোজার মাসে পন্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে তা কতটুকু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে-তাই এখন দেখার বিষয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বাজার কতটুকু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে। পন্যদ্রব্যের মজুদদার ও দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির যে সিন্ডিকেট রয়েছে, তার ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আছে কি না-এই বিষয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন? রোজার আগেই বাড়ছে চিনি ও ছোলার দাম। বছরজুড়েই নিত্যপণ্যের চড়া দামে নাভিশ্বাস ক্রেতাদের। রমজান মাস সামনে রেখে ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে বাজার। চোখ রাঙাচ্ছে রোজায় চাহিদার শীর্ষে থাকা পণ্যগুলো।কয়েকদিন আগেই চিনির ৫০ কেজির বস্তার দাম বেড়েছিল ২০০ টাকার ওপরে। দুইদিন যেতে না যেতেই আবারও বস্তায় বাড়ানো হয়েছে ১০০ টাকা। খুচরাও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়। রোজার আগেই বাড়ছে চিনি ও ছোলার দাম। শুধু চিনি নয়, রমজান মাসকে সামনে রেখে লাগামহীন অধিকাংশ পণ্যের দাম। এই তালিকায় রোজায় চাহিদার শীর্ষে থাকে খেজুর ও ছোলা। সপ্তাহ ব্যবধানে মানভেদে খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এতে বর্তমানে বাজারে মানভেদে খেজুরের কেজি ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। চিনির দাম নিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, চিনির সরবরাহ মাঝেমধ্যে আসে। মাঝেমধ্যে আসে না। এর কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। মিল মালিকরা আমাদের বিক্রয় রশিদ দেন না। তাই আমরা চিনি রাখছি না।এছাড়া ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা। এতে চিঁড়েচ্যাপটা অবস্থা আগে থেকেই বাড়তি দামে চাপে থাকা সাধারণ মানুষের।নিত্যপণ্যের চড়া দামে নাজেহাল এক ক্রেতা বলেন, আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের, আমাদের পক্ষে বাজারে এসে পণ্য কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা যদি বাজারে ১/২ হাজার টাকা নিয়ে আসি, তাতেও চাহিদা অনুসারে বাজার করতে পারছি না। আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি। এটি আমাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাজেই সরকার যদি বাজার তদারকি করেন, তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়।এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র। এক ব্যবসায়ী বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য উৎপাদন হয়নি। তাই চাহিদা অনুসারে বাজারে জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে উদ্যোগের কমতি নেই সরকারের। তবে বাস্তবে এর কোনো প্রভাব নেই বাজারে। তাই আসুন সকলে সকলের প্রতি সহনশীল হই। রোজার মাসে সকল পন্যদ্রব্যের মূল্য সহনশীল পর্যায় রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন এবং দ্রব্যেমূল্য সাধারণ মানুষের সহনশীলতার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করার আহবান মুসুল্লিদের। এদিকে গত ২৯ ফেব্রæয়ারী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর থাকবে প্রশাসন। বুড়িচং-ব্র্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে মনে করেন সচেতন মহল।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া