বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার গ্রাহকরা বিভিন্ন বীমা কোম্পানীর কাছ থেকে সঠিক সেবা পাচ্ছে না

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

Spread the love

বীমা হলো অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায় সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে গ্রাহকের আংশিক কিংবা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহন করে থাকে। সাধারণ ধারণা অনুযায়ী, বীমা একটি সহজ পদ্ধতি যাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে সহজ ভাষায় বীমা মানে কোন সংস্থার সাথে এমন একটি চুক্তি, যা আপনার অসুস্থতা বা অকাল মৃত্যুতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে। আপনাকে জীবিত থাকাকালীন সুবিধাও প্রদান করে। এক্ষেত্রে, আপনি দুইভাবে আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন, আপনার জীবনে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনায় অথবা আপনার অবসর জীবনের আয় হিসেবে। কোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অগ্রত্যাশিত মৃত্যু হলে যে আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয় তা একটি বীমা পরিকল্পনার দ্বারা অনেকাংশে পূরণ করা যায়। পরিবারের বাকি সদস্যরা বীমার এই অর্থ দিয়ে তাদের হোম লোন বা অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন অথবা সন্তানের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারবেন। কিছু বীমা পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংরক্ষণেও সহায়তা করে থাকে যা আপনার অবসরকালীন সময়ের চাহিদাগুলো পূরণে নিয়মিত আয়ের সুবিধা প্রদান করবে। কিন্ত বর্তমানে জীবন বীমা কোম্পানীগুলো এসব নিয়ম কানুণের ধারে কাছেও নেই। প্রতিদিনই শত শত গ্রাহক তাদের অফিসে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। কোন কোন কোম্পানী তাদের বিভিন্ন উপজেলার অফিসগুলোকে সংকোন করে নিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ছাটাই করে ক্ষুদ্র পরিসরে নিয়ে এসেছে। এক সময় বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জীবন বীমা অফিস ছিল দেখার মতো। প্রত্যেকটি অফিসে গ্রাহক ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বীমা কর্মীদের আনাগোনা দেখা যেত। কিন্ত যখনই বীমার গ্রাহকদের মেয়াদ শেষ হয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে তখন থেকে বীমার অফিসগুলো সংকোচন হতে শুরু করেছে এবং বীমা কর্মীর সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। ক্রামান্বয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারের অফিসগুলা বন্ধ করে দিয়ে উপজেলা সদরের অফিস গুলো চালু রেখেছে। বর্তমানে কোন কোন বীমা কোম্পানী তাদের উপজেলা সদরের অফিসগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে এবং শুধু মাত্র জেলা সদরের অফিসগুলো চালু রেখেছে। এতে সাধারণ বীমা কর্মী ও গ্রাহকদের দুর্ভোগ বেড়ে গিয়েছে। গ্রাহকরা তাদের বীমা দাবী আদায়ের জন্য কোম্পানীর অফিস খুঁজে না পেয়ে সাধারণ কর্মীদেরকে চাপ প্রয়োগ করে তাদের প্রাপ্ত টাকার জন্য এবং কোন কোন সময় সাধারণ কর্মীরা হেনস্তার শিকার হতেও দেখা গেছে। কিন্ত বীমা কোম্পানীগুলো চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না আবার ফেরত দিতে বিভিন্ন ভাবে টালবাহানা করছে। গ্রাহকরা তাদের ১০ বছর ১২ বছর এবং ১৫ বছর মেয়াদে বীমার প্রিমিয়াম চালিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কোম্পানীগুলোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কর্মীরা গ্রাহকদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে বীমার জমাকৃত টাকা পেতে হলে নতুন করে আরেকটি বীমা করতে হয়। অন্যথায় অফিসে অফিসে ঘুরেও তাদের জমাকৃত টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। মাসের পর মাস বীমা অফিসে ঘুরেও গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পাচ্ছে না। সানলাইফ ইন্সূরেন্স কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার মাওলানা আবুল কালাম জানান, কোন পাপে যে পেয়েছিল বীমা কোম্পানীতে কাজ করেছি। এখন এক বছর ধরে অফিসের ভাড়া দিতে পারছি না। কোম্পানী নতুন কাজ না হলে ভাড়া দিচ্ছে না। গ্রাহকদেরকে তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত দিতে পারছি না। গ্রাহকরা তাদের টাকার জন্য প্রতিদিনই গাল মন্দ করছে। কিন্ত আমরা অসহায় হয়ে আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী আহসান বীমা প্রকল্পের এক কর্মী জানান, তাদের উর্ধ্বতন অফিসার নুরুন্নবী উধাও হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের টাকা তাকে বাধ্য হয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে। তার বাবার দিনের জমি বিক্রয় করে গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এভাবে বেশির ভাগ বীমা কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোম্পানী পরিবর্তন করেছে অথবা অন্যত্র চলে যাওয়ায় সাধারণ কর্মীরা বিপাকে পড়েছে। তারা বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের হাতে লাঞ্চিত হচ্ছে অথবা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিতে হচ্ছে। গ্রাহক নাজমা আক্তার জানায়-তার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সানলাইফ কোম্পানীতে একটি বীমা করে ১০ বছর চালিয়ে আসছে। এখন মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কুমিল্লা অফিসে গিয়ে ধরনা দিতে হচ্ছে। কুমিল্লা অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়ে দেন যে, তার টাকা পেতে হলে আবার নতুন করে আরেকটি বীমা করতে হবে, অন্যথায় টাকা পাবে না। কিন্ত তার স্বামী ও ছেলেরা তাকে নতুন করে আর বীমা করতে নিষেধ করেছে। তিনি এখন কি করবেন তা নিয়ে বড়ই টেনশনে রয়েছেন। এভাবে প্রতিদিনই জীবন বীমা কোম্পানী অফিসে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছে এবং হয়রানীর শিকার হচ্ছে। সচেতন মহল মনে করেন-জীবন বীমা কোম্পানীগুলোতে মনিটরিং বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যে সকল বীমা কোম্পানী গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে গড়িমশি করছে। সে সকল কোম্পানীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া