বুড়িচংয়ে ঘর-বাড়ী নির্মাণের ফলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্বহীন বেশিরভাগ খাল

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কুমিল্লার উত্তরে অত্যন্ত নিকটবর্তী উপজেলা বুড়িচং। এ উপজেলার উত্তরে দেবিদ্বার ও ব্রাহ্মনপাড়া, পশ্চিমে চান্দিনা, দক্ষিণে আদর্শ সদর এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অবস্থিত। বুড়িচং উপজেলার আয়তন প্রায় ১৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার। বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৭২টি গ্রাম রয়েছে এবং ১৫২টি মৌজা রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ২,৯৯,৭০৫ জন। মোট ফসলি জমির পরিমান ৩০৪৮০ হেক্টর, পরিমান ১২০০০ হেক্টর, এক ফসলী জমি ৭৫০ হেক্টর, দুই ফসলী জমি ৪৭৫০ হেক্টর, তিন ফসলী জমি ৫৮১০ হেক্টর জমি রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কাগজে কলমে ২০৩টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গিয়েছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঠিক তদারকীর অভাবে পানি নিঃস্কাশনের খালগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও খালের কোন প্রকার নির্দশনই নেই। ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট নির্মাণ করে খালগুলো দখল করে ফেলেছে। বুড়িচং উপজেলার ভূমি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ছোট বড় প্রায় ২০৩টি খাল রয়েছে। তার মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে ১১০টি, বাকশীমুল ইউনিয়নে ৩টি, বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ২৬টি, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে ৩টি, ষোলনল ইউনিয়নে ৫টি, ময়নামতি ইউনিয়নে ৯টি, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৬টি, মোকাম ইউনিয়নে ৩০টি খাল রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানায় যায়, কাগজে কলমে বিভিন্ন ইউনিয়নে খালের সংখ্যা নির্ধারন থাকলেও বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই। জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন গ্রামের খাল ও নালাগুলো ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিপন্য ধান। ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে অনেক কৃষক পরিবারের যাবতীয় চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পয়াতের জলায়। সামান্য একটু বৃষ্টি হলে জলাব্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে কৃষকরা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য বিএডিসি কর্তৃক কয়েকটি খাল পুনঃখনন করলেও পরিপূর্ণ ভাবে খনন কাজ সম্পাদন না করায় পানি নিঃষ্কাশন হচ্ছে না। বিশেষ করে বুড়িচং সদর বাজারের পশ্চিম পাশের খালটি বিভিন্ন প্রভাবশালীর কারণে সঠিক ভাবে খনন কাজ করা হয়নি। কারো বাড়ী রক্ষা, কারো বা দোকান রক্ষা করতে গিয়ে খালটির খনন কাজ ভালো ভাবে হয়নি। আবার খনন করার কিছু দিনের বুড়িচং বাজারের ময়লা আর্বজনা ফেলে ভরাট করে ফেলেছে। বুড়িচং বাজার ও সিএনজি এবং অটোরিক্সা স্ট্যান্ড থেকে কোটি টাকার ইজার আদায় করা হলেও ইজারাদারদের সঠিক তদারকির অভাবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতায় বাজারের ময়লাগুলো খালের মধ্যে ফেলা হয়। এতে খাল ও নালাগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কালাম আজাদ সুজন বলেন, পয়াতের জলা থেকে হরিপুর-জরইন হয়ে যে খালটি গিয়েছে। তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। তাই হরিপুর জরইনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালটি দ্রæত খনন করা প্রয়োজন। পয়াতের জলার পানি নিঃস্কাশনের জন্য খাল পুনঃখনন আন্দোলনের মুখপাত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পয়াতের জলার কৃষকদের দুঃখ কষ্ট লাঘব করার জন্য খাল পুনঃখনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরে বিভিন্ন সময় স্বারক লিপি প্রদান করেছি। ২০২২ ইং সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা-৫ এমপি এডভোকেট আবুল হাসেম খানের নিকট পয়াতের জলার পানি নিঃষ্কাশনের খাল পুনঃখনন করার জন্য আবেদন করেছি। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। অচিরে যদি বুড়িচং বাজারের পশ্চিম অংশের খালের ময়লা পরিষ্কার না করলে উপজেলার পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে গণ অনশনের কর্মসূচি পালন করবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার বলেন, বুড়িচং বাজারের পশ্চিম অংশের খাল পরিদর্শন করবো। বাজারের ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারের ময়লা ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গার সন্ধান করা হচ্ছে।

  • বুড়িচং