‘বহিরাগতদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি’ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু’ ‘ব্রাহ্মণপাড়ায় ১জনের মৃত্যু

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল রাজধানী শহর ঢাকা হলেও বর্তমানে রাজধানী ছেড়ে নগর-মহানগর অতিক্রম করে জেলা-উপজেলা এবং গ্রাম-গঞ্জে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহর থেকে আসা রোগীদের সংখ্যা বেশি। এতে আতংক হওয়ার কিছু নেই এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসায় ডেঙ্গু ভালো হয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গতে আক্রান্ত হয়ে ৭ আগষ্ট সোমবার সকাল পর্যন্ত গত এক দিনে সারা দেশে ১৪জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ২৭৫১জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১১৯জন এবং ঢাকার বাহিরে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৩২জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ৯হাজার ৫৭২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঢাকার সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ৪ হাজার ৬৫২জন এবং সারা দেশের অন্যান্য হাসপাতালে ৪ হাজার ৯২০ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি আছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট শনিবার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ এলাকার মৃত সুন্দর আলী চেয়ারম্যানের বাড়ীর কমল মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫) জ্বর ও বাতের ব্যথাজনিত সমস্যা নিয়ে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হয়। পরের দিন ৬ আগষ্ট রবিবার দুপুরে সে মৃত্যুবরণ করে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে গ্রাম-মহল্লার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতন মহল মনে করেন বর্ষায় জমাটবদ্ধ পানি থেকে এডিস মশার উৎপত্তি। তাই সকল স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা এবং সরকারী-বেসরকারী অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের আশে পাশের এলাকা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা এবং পানি নিঃষ্কাশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যেন কোথাও পানি তিন চারদিন জমতে না পারে। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের নিজ দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিণায় পরিষ্কার পরিছন্ন অভিযান দেওয়া উচিত। প্রত্যেক সাধারণ মানুষও ডেঙ্গুর প্রার্দূভাব লাঘবের জন্য নিজেদের বাড়ির আঙ্গিণা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখা উচিত। ঢাকা শহর কিংবা অন্যান্য শহর থেকে যারা গ্রামে আসে তাদের শরীরের ডেঙ্গুর জীবাণু আছে কি না তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। বুড়িচং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মীর হোসেন মিঠু বলেন, বুড়িচং উপজেলায় এই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৫জন রোগী পাওয়া গেছে। তবে আক্রান্তের বেশির ভাগই ঢাকা থেকে আগত রোগী। বুড়িচং উপজেলায় এই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায় নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে রেখেছি। এ বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা দের নিয়ে সভা করেছি। সচেতনা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সকল সরকারী দপ্তরে লিফলেট বিতরণ করেছি। যেন তারা সব জায়গায় সচেতনতার বার্তা পৌছে দিতে পারে। তিনি সকলকে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ প্রদান করেন এবং কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেই দিকে গুরত্ব দেওয়ার কথা বলেন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, গত তিন মাসের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০থেকে ৪০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাহিরের। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আগতদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। তিনি আরোও বলেন, এলাকার বাহির থেকে আসা লোকজনের প্ল্যাটলেট পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। প্ল্যাটলেট কম হলে এবং রোগী প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে আমরা চিকিৎসা প্রদান করি আর যদি রোগীর অবস্থা প্রাথমিক স্তর অতিক্রম করে ফেলে তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে দেই। ডেঙ্গুর সচেতনতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমরা উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রত্যেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার এবং ওষুধ ছিটানোর জন্য। সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টানাতে হবে, কয়েল জ্বালাতে হবে এবং বাড়ির আঙ্গিনার ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। ডেঙ্গুর চিকিৎসা আছে। আমরা হাসপাতালে ৫০ টাকার বিনিময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করি। ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা বিছানাপত্র রেডি করা আছে এবং ডাক্তার ও নার্সদেরকে আলাদা ভাবে দায়িত্ব দেওয়া আছে।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া