‘প্রশাসক হিসেবে কাজ করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান অপসারণ

লেখক: মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

Spread the love

দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩২৩ পৌরসভার মেয়র এবং দেশের ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদ ও ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অপসারণ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যানদেরকেও। গত ১৯ আগষ্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দেশের ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদ ও ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ১৯ আগষ্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। চেয়ারম্যানদের অপসারণ ও মৃত্যুর কারণে চেয়ারম্যানের মোট শূন্য পদ ধরে মোট ৪৯৪টি পদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হলো। এ দিকে নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মৃত্যু ওই পদ শূন্য ঘোষণা করে সেই পদেও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের সব জেলায় (৬১টি) প্রশাসক নিয়োগ করেছে সরকার। জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। আটটি জেলা পরিষদে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) এবং ৫৩টি জেলা পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তা নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে গত ১৭ আগস্ট উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ এ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যানকে অপসারণের বিধান রাখা হয়। আদেশে উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের। এর আগে অপর এক আদেশে ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। আর খুলনার কয়রা উপজেলায় চেয়াম্যানের মৃত্যুর কারণে পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর দেশের ৪৯৪টি উপজেলায় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সারা দেশের উপজেলা পরিষদের ৯৮৮ জন ভাইস চেয়ারম্যানকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ৪৯৪ জন (পুরুষ) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৪৯৪ জন। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ১৩ ঘ প্রয়োগ করে এসব ভাইস চেয়ারম্যান ও সব মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদের স্ব স্ব পদ থেকে অপসারণ করা হলো। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র- জনতার আন্দোলনের ফলে স্বৈরশাসক হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে চলে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা জেলার বুড়িচং-ব্রাহ্মণাপাড়া উপজেলার নেতৃস্থানীয় নেতাদের জনসম্মুখে দেখতে পাওয়া যায় না। কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহেরকেও কেউ দেখতে পায় নাই। তিনিও অন্যান্য এমপি মন্ত্রীদের মতো আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন। তারই ভাতিজা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান আবু তৈয়ব অপিও চাচার মতো আত্মগোপনে আছে। উপজেলার কোন কার্যক্রমে তাকে দেখা যাচ্ছে না। জানা যায়, ৪ আগষ্ট তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরে ছাত্রলীগের ক্যাডারদেরকে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য সিএনজি অটোরিকশা স্টেশন এলাকায় অবস্থান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীদেরকে হুমকি ধামকি দেন। এছাড়া জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল রেলষ্টেশন অবরোধ করলে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব অপি তার দলবল নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অবরোধ ভেঙ্গে ফেলার জন্য বল প্রয়োগের চেষ্টা করে। কিন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পিচু হটতে বাধ্য হয়। স্বৈরশাসক হাসিনা পদত্যাগ করার পর তাকে আর ব্রাহ্মণপাড়ায় দেখা যায় নাই। অপর দিকে সাবেক এমপি মুহাম্মদ আবু জাহের এর ঘনিষ্ঠজন এবং চাচা নামে পরিচিত ও বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দারকেও বুড়িচং উপজেলা পরিষদে দেখতে পাওয়া যায় না। তিনি গত ৪ আগষ্ট সকালে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিপক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেইটে অবস্থান করেন এবং বুড়িচং বাজারে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান করেন। তিনিও সরকার পতনের সাথে সাথে আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর আমরা নিয়োগপত্র জমা দিয়েছি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের শূন্যতা সাধারণ জনগণ যেন অনুভব না করে সেই আলোকে জনসেবা দিয়ে যাব এবং বর্তমানেও যাবতীয় কার্যক্রম যথারীতি চলমান রয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম চলবে, তবে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপনে অপসারণ করার পর প্রশাসক হিসাবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

  • বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া