‘পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায়’ বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ার বেশিরভাগ সড়কের বেহাল দশা

লেখক: Sohel Islam
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

বর্ষার মৌসুম শুরু হয়েছে। কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টি লুকোচুরি খেলায় প্রকৃতি মত্ত রয়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে বৃষ্টি যেন মানুষের জন্য আর্শীবাদ নিয়ে আসে। মানুষ গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট বৃষ্টির জন্য প্রার্থণা করে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেছে আবার কোথাও কোথাও মসজিদ মাদরাসায় দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। অবশেষে বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেল। মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্ত বৃষ্টির ফলে গরম থেকে নিস্তার পেলেও নতুন ভাবে আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার পাশে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি নিঃস্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় দিনে দিনে রাস্তা গুলোর বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। এতে গরম থেকে মানুষের মুক্তি মিললেও নতুন দুর্ভোগে পতিত হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশার কারণে স্বাভাবিক চলাচলের ব্যাঘাত ঘটছে। কোন কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছেলে মেয়েদের দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তা ঘাট খারাপ থাকায় তারা সময় মতো স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় উপস্থিত হতে পারছে না। এছাড়া খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিঃস্কাশনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক খাল ভরাট করে দোকান, বাড়ী-ঘর নির্মাণ করায় সহজে পানি নিঃস্কাশন হচ্ছে না। এতে যত্র-তত্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাগুলোতে পানি জমে থাকায় গাড়ী চলাচলের ফলে চাকার ঘর্ষণে পিচগুলো উঠে যাচ্ছে। এতে অল্প দিনের মধ্যেই রোডগুলোর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লা মীরপুর এম.এ গণি রোডের ভরাসার বাজারের দুই পাশে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ভরাসার বাজার থেকে পয়াতের রোড,ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস রোড, ভরাসার প্রাথমিক বিদ্যালয় রোডের দুই পাশে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বাজারের পানি সহজে নিঃস্কাশন হতে পারে না। খাড়াতাইয়া নতুন বাজার এলাকার খালটি ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অত্র এলাকার বৃষ্টির পানিগুলো জমাট হয়ে থাকে। খাড়াতাইয়া বাজারের পশ্চিম দিক থেকে চলে আসা খালটি খাড়াতাইয়া ইসলামিয়া মাদসারা কাছে আসার পর প্রায় অস্তিত্বহীণ হয়ে গেছে। বুড়িচং নিউ মার্কেট এলাকায় আওয়ামীলীগের উপজেলা কার্যালয়ের সামনে সামান্য বৃষ্টি আসলেই পানি যেন ঢেউ খেলে। এটা কি কোন রোড না কি খাল তখন বুঝাই যায় না। এখানের দুই পাশের ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে নিঃস্কাশন হতে পারে না। তাই দীর্ঘক্ষণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। থানা রোডের দারুস সালাম মাদানীয়া মাদরাসা থেকে বুড়িচং সুন্নিয়ার সিনিয়ার মাদ্রাসা হয়ে বুড়িচং সরকারী হাসপাতালের গেইট পর্যন্ত রোডের দুই পাশে কোন প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। পূর্বে ড্রেন থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ও বাসা বাড়ীর পানি নিঃষ্কাশন হচ্ছে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে রোডে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বুড়িচং সদর ইউনিয়ন পরিষদ রোড, সুন্নিয়া মসজিদ রোড ও উপজেলা মসজিদ মার্কেটের এক পাশে অপরিকল্পিত ভাবে অনেক উঁচু করে ড্রেন করার ফলে ড্রেন থেকে রোডের অবস্থান নিচু হওয়ায় ড্রেনের পানি রোডের উপর জমাবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে জনচলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি আরাগ রোডের কাজ শুরু করলেও রোডের পাশের ড্রেনগুলো মেরামত না করায় বৃষ্টির পানি নিঃস্কাশন হচ্ছে না। বারেশ্বর চৌমুহনীর রোডগুলোতেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। তাই রোডগুলোর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখতে পাওয়া যায়। সাহেবাবাদ দক্ষিণ বাজার তালতলা থেকে সাহেবাববাদ ডিগ্রী কলেজ পর্যন্ত কোন প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার এমএ গণি রোডের ঈদগাহ থেকে সিএনজি ষ্টেশন পর্যন্ত কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। অপর দিকে সিএনজি স্টেশন থেকে সদর ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত কোন প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রোডের বিভিন্ন স্থানে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমাট হয়ে যায়। ফলে এই রোডগুলোতে চলাচলা করা কষ্টকর। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাজঘর থেকে চারিপাড়া রোডের অবস্থা একেবারে নাজুক। এই রোড দিয়ে সাজঘর, চাড়িপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। রোডটি কাঁচা হওয়ায় বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এতে অটোরিক্সা ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলাচল তো দূরের কথা হেঁটে চলাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। পথচারী মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, কাঁচা এই সড়কটিতে অন্য সময় অটোরিক্সা ও সিএনজি চললেও বৃষ্টির দিনে হেঁটে চলাও অসম্ভব। অটোরিক্সা চালক জহির মিয়া বলেন, বৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এই সড়কে অটোরিক্সা চালিয়েছি, এখন অন্য সড়কে চালাই। বৃষ্টির কারণে সড়কে ছোটবড় অনেক গর্ত হয়েগেছে, সড়কটি মেরামত না করলে বৃষ্টি শেষ হলেও গাড়ী চালানো যাবেনা। চান্দলা মডেল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, সোমবার রাতে আমার বড় ফুফু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়াটা অতি জরুরি হয়ে যায়। কিন্ত কোন সিএনজি বা অটোরিক্সা এই রোড দিয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে অন্য রোডের মাধ্যমে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। এলাকার সাধারন মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘব করার জন্য এই রোডটিকে দ্রæত পাকা করা প্রয়োজন। চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, এই রোডটি মাটি ভরাট করে প্রশস্থ করেছি। পাকাকরনের জন্য উপজেলায় আবেদন করেছি। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার রোডটি দেখে গেছেন। আশা করি অচিরেই পাকাকরনের কাজ শুরু হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বুড়িচং উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক মোঃ মোসলেহ উদ্দিন বলেন,দীর্ঘ দিন যাবৎ ড্রেন না থাকায় সরকারী রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা আসলেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, আমাদের গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালগুলো এখন পরিচ্ছন্নতা ও খননের অভাবে এবং মানুষের দখলের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খাল, পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ীগুলো তলিয়ে যাচ্ছে ও দীর্ঘ সময়ের জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, এতে করে ফসলহানি এবং মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে, রোগ জীবাণু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের এই অঞ্চলে প্রচুর প্রবাসী থাকার কারণে গত দশ বছরে অপরিকল্পিতভাবে অনেক বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। দালানকোঠা হচ্ছে, কিন্ত কেউই ড্রেনেজ সিস্টেমকে আমলে নিচ্ছে না এবং পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করছে না, সেজন্য স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের তত্বাবধানে প্রত্যেকটা বাড়ি ঘর নির্মাণ ছাড়পত্র থাকা উচিত যেখানে ড্রেনেজ সিস্টেমকে প্রাধান্য দেয়া হবে। অন্যথায় সামনে আরো ভয়াবহ রূপ ধারন করবে।

  • ব্রাহ্মণপাড়া