“জমি চাষের ট্রাক্টর সড়কে” বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় ভেঙ্গে যাচ্ছে গ্রামীন সড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা

লেখক: Sohel Islam
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সড়ক গুলোতে দেদারছে চলছে হাল চাষের ট্রাক্টার। ভোর রাত থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ছোট বড় সকল সড়কে বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে ট্রাক্টরগুলো। লাইসেন্স, সিগনাল লাইট ও হর্ণ ছাড়াই এগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন না হওয়ায় অনেক অদক্ষ ও কিশোর বয়সের ছেলেরা এসব গাড়ি চালাচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাসহ রাস্তায় যানজট, কালো ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ হচ্ছে এবং রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে। বৃষ্টি আসলে বিভিন্ন পাকা সড়কে ট্রাক্টরের মাটি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে মটর সাইকেল, অটোরিক্সা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা উল্টে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।এছাড়াও এসব যানবাহনের কারণে গ্রামগঞ্জের কাঁচা-পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক্টরের বড় বড় বিট ওয়ালা চাকার কারনে কাচা ও পাকা রাস্তার অনেক ক্ষতি হয়। কাচা রাস্তার মাটি উঠে খানা খন্দকে পরিনত হয় এবং পাকা রাস্তার পিচগুলো উঠে যায়। তাই সড়কগুলো অল্প দিনেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে যায়। এই ট্রাক্টর গুলো প্রকৃতপক্ষে হাল চাষ করার জন্য তৈরী করা হয় এবং আমদানী করা হয়। কিন্ত কি অসাধূ ব্যাবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় হাল চাষ না করে কোন ওয়ার্কসপ থেকে একটি বডি কিংবা ট্রলি তৈরী করে ইঞ্জিনের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বিভিন্ন পরিবহন নামে সড়কে ছেড়ে দেয়।বৈধ কাগজপত্র বলতে কিছুই নেই। তবু রাস্তার রাজা হয়ে দিন রাত চলছে তো চলছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন মাথা ব্যাথা। তাদের সঠিক তদারকির অভাবে সরকারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে যানজটের পাশাপাশি প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাক্টর শুধুমাত্র চাষাবাদের জন্য বৈধ থাকলেও এখন অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে ভারী কাজ করানোর জন্য লোকজন এসব যান ব্যবহার করে। সরেজমিনে দু’উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন অনেক বালু, ইট ও সুরকী বিক্রির মহল তৈরি হয়েছে। নিষিদ্ধ ট্রলি ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, মাটি ও গাছসহ বিভিন্ন পণ্য অতিরিক্ত বোঝাই করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কখনোও কৃষি জমির মাটি ও বালি মহাল থেকে পলি বালু নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। যদিও এসব যানবাহন রাস্তায় পরিবহনের কোন সুযোগ নেই। অনেক ট্রাক্টারের মালিক চাষাবাদের পর ট্রাক্টারে অতিরিক্ত বডি লাগিয়ে অবৈধ ভাবে রাস্তায় নেমে আসে। ইট, সিমেন্ট, বালু, মাটি ও কংক্রিট পরিবহন করে। আর লোকজন টাকা বাঁচানোর জন্য ট্রলি ও ট্রাক্টর ভাড়া করে। এতে পরিবহনে অনুমদিত গাড়িগুলো লোকেসানে পরছে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না করার কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী উজ্জল চন্দ্র রায় বলেন, ট্রলি ও ট্রাক্টর যখন ব্রাহ্মণপাড়া বাজার অতিক্রম করে, তখন প্রায়ই বাজারে যানজট সৃষ্টি হয়। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় যখন এসব গাড়ি রাস্তায় চলে তখন স্কুলের বাচ্চারা রাস্তা পারাপারের সময় অনেক ভয় পায়। ট্রাক্টার চালক মাইনুদ্দিন ও গোপাল নগর গ্রামের ট্রলি চালক মোঃ ফারুক বলেন, ‘আমরা বেকার ও গরিব মানুষ, গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ নেই, শিখে নিয়েছি। গাড়ি বৈধ-অবৈধ বুঝি না। আমরা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে পরিবার চালাই। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে মটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিক্সার লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্রের জন্য অভিযান পরিচালনা করলেও রহস্যজনক কারনে সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো অবৈধ ট্রাক্টরগুলোর উপর কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা করে না। এই সুযোগে দিনে দিনে বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কাচা পাকা সড়কে হাল চাষের ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইট ভাটার মালিক ও মাটি এবং বালু বিক্রয়ের সিন্ডিকেটরা হাল চাষের ট্রাক্টরগুলোতে অবৈধ ট্রলি লাগিয়ে সড়কের উপর ছেড়ে দেয়। তাদের ইট, বালু ও মাটি পরিবহন করার জন্য। সচেতন মহল মনে করেন এসব নিষিদ্ধ গাড়ি বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। না হলে দিনদিন এসব যানবাহনের প্রভাবে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং গ্রামীণ জনপদ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা আছে।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া