‘ছুটির দিনে এসএসসির ফল’ সবাই অনলাইনে রেজাল্ট দেখে, আনন্দ-উৎসবে ভাটা পড়বে না

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

এসএসসি ও সমমানের ফলাফল আগামী ২৮ জুলাই শুক্রবার প্রকাশ করা হবে। এরই মধ্যে দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ফল প্রস্তুত করেছে। এখন শুধু প্রকাশের অপেক্ষা। শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল তুলে দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে এ ফলাফল প্রকাশের ঘোষণা দেবেন। এরপর অনলাইনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা ফলাফল দেখতে পারবেন।

এবার ‘রীতি’ ভেঙে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসএসসির ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে শুক্রবার তথা ছুটির দিনে ফল প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে ফল প্রকাশ করায় উৎসবের যে আমেজ, তাতে ভাটা পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। তারা যে কোনো কার্যদিবসে ফলাফল প্রকাশ করা হলে ভালো হতো বলে মনে করেন। একই সময়ে বেসরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে ঢাকায় লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচিতে রয়েছেন। ফলে এবার এসএসসির ফল প্রকাশের দিন ‘ভিন্ন পরিবেশ’ তৈরি হতে পারে বলেও ধারণা অনেকের।

তবে শুক্রবার ছুটির দিনে ফল প্রকাশ হলেও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আনন্দ-উৎসবে ভাটা পড়বে না বলে দাবি করেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার।

তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, সত্যি বলতে কি, এখন সবাই অনলাইনে ঘরে বসে সহজেই রেজাল্ট দেখে। স্কুলে গিয়ে রেজাল্ট পাওয়ার অপেক্ষায় থাকার দিন আর নেই। এখন অনলাইনে রেজাল্ট দেখে প্রত্যাশিত ফলাফল হলে শিক্ষার্থীরা স্কুলের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে হয়। তারপর স্কুলে যায় এবং আনন্দ-আড্ডায় মেতে ওঠে। আনন্দ ভাগাভাগি করে। শুক্রবার ছুটির দিনে এবার ফল প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করি।

তপন কুমার সরকার আরও বলেন, দু-তিন বছর আগেও আমরা তো শনিবার রেজাল্ট পাবলিশড (ফল প্রকাশ) করেছি। সমস্যা হয়নি। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ফল দেখে আনন্দে মাতবে, এখন এটিই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে শিক্ষক-অভিভাবকরা বলছেন, শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকে। ফলপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা হয়তো কেউ কেউ যাবেন। তাতে চিরাচরিত উচ্ছ্বাস থাকবে না। ফল প্রকাশের দিন স্কুলের অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরাও এ উচ্ছ্বাসে যোগ দেয়। বড় ভাই-বোনদের সাফল্যে তারাও উদ্বেলিত ও উৎসাহ বোধ করে। সেটিও হয়তো এবার হবে না।

রাজধানীর মধ্যবাড্ডার আদর্শনগর এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম সোহাগ। তিনি এবার এসএসসির ফলপ্রত্যাশী। সোহাগ জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইনে ফল দেখবো। যদি সার্ভারে সমস্যা হয় বা এসএমএস দিয়ে না পাই, তখন তো স্যারদের ফোন করলেই ফলাফল জানিয়ে দেবে। কী না কী রেজাল্ট হবে, স্কুলে যেতে ভয় ভয় লাগবে।

রাজশাহীর পি এন সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন হাদিসুর রহমানের বড় মেয়ে। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর হড়গ্রাম এলাকায়। জানতে চাইলে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, মেয়ে কাল (মঙ্গলবার) রাতেও বলছিল- বাবা এবার শুক্রবারে রেজাল্ট কেন দিচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর তো আমি জানি না। বললাম- শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করোনি কেন?

তিনি বলেন, আশা করছি, মেয়েটা ভালো রেজাল্ট করবে। রেজাল্টের দিনে স্কুল খোলা থাকলে ওদের আনন্দ-উৎসাহটা বেশি থাকে। ওরা আনন্দ করবে, আমরা সেখানে থেকে দেখবো। এটিই চোখের শান্তি, ভালো লাগতো। তবে সরকার যেহেতু শুক্রবার দিন ঠিক করেছে, তাই এ নিয়ে আপত্তিও করছি না। রেজাল্টটা দ্রুত হয়ে যাক সেটিই চাই।

রাজধানীর বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিনিধিকে বলেন, কেন এবার শুক্রবার দিন ঠিক করেছে, তা বলা মুশকিল। তবে ছুটির দিনে না হলেই বেশি ভালো হতো। ভালো ফল হাতে পেয়ে সবার সঙ্গে উচ্ছ্বাস করতে পারাটা শিক্ষার্থীদের হক বলে আমি মনে করি। তবুও আমরা চেষ্টা করবো- শিক্ষার্থীদের নিয়ে উৎসবে মেতে উঠতে। ওদের আনন্দ বাড়াতে সব আয়োজন থাকবে আমাদের।

ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক প্রতিনিধিকে বলেন, অনলাইনে রেজাল্ট সহজে পাওয়া যায় এখন। এ অনলাইন বিষয়টা সহজ হয়ে যাওয়ায় স্কুল খোলা থাকলেও যে খুব একটা শিক্ষার্থী রেজাল্ট নিতে বা আনন্দ করতে স্কুলে আসে, তা নয়।

ঢাকা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ভূঁইয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমার অভিজ্ঞতা যেটুকু, তাতে বলতে পারি- এখন কোন দিনে ফল প্রকাশ হলো- সেটি ব্যাপারই না। শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে স্কুলে এলেও আগে রেজাল্টটা অনলাইনেই দেখে। প্রত্যাশা মত রেজাল্ট হলে তারা স্কুলে এসে হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও আনন্দ-উৎসব করে। অনলাইনে ফল প্রকাশের কারণে এখন আর সে উৎসবের রেওয়াজটা নেই। তাই শুক্রবারে ফল প্রকাশে তেমন কোনো প্রভাব দেখছি না।

ফল প্রকাশে ‘নজর নেই’ আন্দোলনরত শিক্ষকদের
বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মাঝে এসএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে তেমন কোনো ‘আগ্রহ’ নেই। অন্যবার তারা শিক্ষার্থীদের ফল কী হয়, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও এবার দাবি আদায়েই নজর তাদের। আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া পটুয়াখালীর পূর্ব-মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আখতারুজ্জামান প্রতিনিধিকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের চেষ্টা সব সময়। ওরা যেন ভালো রেজাল্ট করে তার জন্য আমরা খেটেছি। এখন তো আমরা নিজেদের বৈষম্য মেটাতে এখানে এসেছি। এবার শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। আমাদের নজর এখন দাবি আদায়ে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির চরভাটপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটির শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরাই পড়িয়েছি। ওরা পরীক্ষা দিয়েছে। ওদের রেজাল্টের দিনে আমরা থাকতে পারবো না। আমরা ঢাকায় এসে রাজপথে আছি। ওরাও আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আছে। আমাদের কষ্টে ওরাও কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চাই- বৃহস্পতিবারের মধ্যেই আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। আমরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফল প্রকাশের দিন আনন্দ-উৎসব করতে চাই।

গত ৩০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সময়সূচি অনুযায়ী- ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিলের (ভোকেশনাল) লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৩ মে। আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ মে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে একাধিক বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার তারিখও কয়েকদিন পিছিয়ে যায়।

৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখের বেশি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে এবার যথাসময়েই প্রকাশ করা হচ্ছে এসএসসির ফল।

এসএসসির ফল জানা যাবে যেভাবে
শিক্ষার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট educationboardresults.gov.bd প্রবেশ করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া এসএমএসের মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাবে।

এসএমএসে ফল জানতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে ইংরেজিতে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর দিতে হবে। এরপর আবারও স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। যেমন ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে- SSC DHA ROLL YEAR লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে পরীক্ষার্থীকে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট পেতে বোর্ডের ওয়েবসাইটে www.dhakaeducationboard.gov.bd প্রবেশ করতে হবে। এরপর রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইআইআইএন (EIIN) অ্যান্ট্রি করতে হবে। তাহলেই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড হয়ে যাবে।

  • বাংলাদেশ