“ঘাট নেই নৌকা নেই” জৌলস হারিয়ে বিলুপ্তির পথে ৩শ বছরের পুরাতন নানুয়ার বাজার

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

Spread the love

কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত নানুয়ার বাজার। এক সময়ের খরস্রোতা গোমতী নদী তার রূপ যৌবন ও লাবণ্যতা হারিয়ে এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। সারি সারি পাল তোলা নৌকা দেখা যায় না। জেলেদের মাছ ধরার নৌকাও দেখতে পাওয়া যায় না। নদী পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নদীর তীরে গড়ে উঠা বেশির ভাগ হাট-বাজারগুলো বিলুপ্তি হয়ে গেছে। আজ থেকে প্রায় ৩০০-৩৫০ বছর পূর্বে ঐতিহ্যবাহী নানুয়ার বাজারের গোড়াপত্তন হয়েছিল। কে বা কারা এই বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেছে কেউ তার সন্ধান দিতে পারে নি। কুমিল্লা জেলার উত্তরে সবচেয়ে বৃহত্তম বাজার হিসেবে নানুয়ার বাজারের সু-খ্যাতি ছিল বলে কথিত রয়েছে। বাজারের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে ছিল গোমতী নদী। নদীর ঘাটে বাঁধা থাকতো সারি সারি নৌকা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পন্য দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য নৌকায় করে চলে আসতো এই বাজারে। বড় বড় পাইকারদের দোকান ছিল এখানে। মুদি দোকান, মনোহারী দোকানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পন্য দ্রব্যের দোকান ছিল। ক্রমান্বয়ে নদী পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় নানুয়ার বাজারের জৌলস কমতে থাকে। সড়ক পথের উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে সড়কের পাশে নতুন নতুন বাজার গড়ে উঠে। ফলে নানুয়ার বাজার কালের পরিক্রমায় সকল জৌলস হারিয়ে বিলুপ্তি হওয়ার পথে এসে দাঁড়িয়েছে। আগের মতো নেই দোকান-পাট, নেই লোকজনের সমাগম, নদীর ঘাট নেই, সারি সারি পাল তোলা নৌকাও নেই। নেই মাঝি মাল্লাদের হৈ চৈ। যেন এক মৃত্যু ভূমিতে পরিণত হয়েছে এক সময়ের বিখ্যাত বাজারটি। সময়ের ব্যবধানে গোমতী নদীটিও বাজার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে এবং অপর দিকে কুমিল্লা থেকে মীরপুর সড়কটির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে কুমিল্লা-মীরপুর সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে অনেক হাট-বাজার। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরা বাজারে কয়েকটি বট গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হিসেবে। তার নিচে আশ্রয় নেওয়া ছোট ছোট কয়েকটি দোকান ঘর। পুরো বাজারে ১০-১৫ জন লোকও নেই। অনেক পুরাতন একটি দোকানে গিয়ে জানা যায়-এই দোকানটি বর্তমান মালিকের দাদার আমলের। তার দাদা এই দোকানে জিলাপী ও অন্যান্য খাবার সামগ্রী বিক্রয় করেছে। তার পর তার বাবা দোকানটি পরিচালনা করেছে। এখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছে। পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে তিনি এখন এই দোকানটি পরিচালনা করছেন। বেড়াজাল গ্রামের আবদুর রশিদ (৭০) এর সাথে কথা হয় বাজারের বিষয়ে। তিনি বলেন-তার বাপ দাদার কাছ থেকে এই বাজারের গল্প শুনেছেন। তবে কখন কবে এই বাজারটির গোড়াপত্তন হয়েছে তা বলতে পারবে না। বৃটিশ আমলে গোমতী নদীর ঘাটে প্রায় ২০০ নৌকা বাঁধা থাকতো। ভাটির অঞ্চলের মানুষে বিভিন্ন পন্য দ্রব্য নিয়ে আসতো এবং যাওয়ার সময় বিভিন্ন পন্য দ্রব্য নিয়ে নিজের এলাকায় চলে যেত। ভাটির অঞ্চলের মানুষ নৌকায় করে মুদি মাল, ভাটিয়ালী আলু, কাঁঠাল, গরু, মাটির জিনিসপত্র, আইন গুড়, গুড়ের হাঁড়ি, মাছের নৌকাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এই বাজারে আসতো। এখনতো সেই নৌকাও দেখা যায় না-সেই মানুষগুলোও নেই। নদীটা চলে গেছে অনেক দূরে। মোঃ আবুল হোসেন বলেন, তখন কুমিল্লার চক বাজারের ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকে পাইকারী মালামাল ক্রয় করে চক বাজারে নিয়ে বিক্রয় করতো। অটোচালক মানিক মিয়া বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এই বাজারটি মরে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এবং নানুয়ার বাজার খেয়াঘাটের উপর ব্রীজ নির্মাণ হলে বাজারটি আবার যৌবন ফিরে পাবে। আমাদের দাবী এই ব্রীজটি যেন দ্রæত করে দেয়। তাহলে নদীর দুই পাড়ের মানুষদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে-এতে বাজারটিও প্রাণ ফিরে পাবে। বাজারটির দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত রয়েছে নানুয়ার বাজার দাখিল মাদ্রাসা এবং আরো একটু পূর্বে রয়েছে নানুয়ার বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে রয়েছে হিন্দুদের মন্দির।

  • বুড়িচং