গ্রাহকদের অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে  ভুয়া এনজিও উধাও

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

Spread the love

ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিও ঋণ দেয়ার প্রলোভনে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে। সোমবার  প্রায় অর্ধশত গ্রাহক ঋণের টাকা নিতে এসে অফিসে তালাবদ্ধ দেখেন। পরে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া সদর এলাকায় আবুল কাশেম মুহুরীর
বাসা ভাড়া নেয় ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিও । ওই বাসায় এনজিও-র নামে নেয়া ভাড়া নেয়া অফিস চালু করেন এনজিও কর্মীরা। ঋণ বিতণের নির্ধারিত সময় ১৫ জানুয়ারি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধ শতাধিক গ্রাহক এসে অফিস তালাবদ্ধ পায়। এসময় গ্রাহকরা হট্টগোল করতে চাইলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিওর পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নারীদের কাছে থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নেয়। ঋণ প্রদানের ফাঁদে ফেলে এসব গ্রাহকদের কাছ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হারে এককালীন সঞ্চয়  গ্রহণ করে তারা।
সোমবার সকালে ঋণ বিতরণের তারিখ ধার্য্য করে। ঋণের টাকা নিতে এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানান,  তারা  ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ সঞ্চয়ের নামে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া সদর এলাকার আবুল কাশেম মুহুরীর ভবনে। এ সংবাদ শুনে”ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি”এর অফিসের সামনে জড়ো হন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়,  উপজেলার সদর এলাকার ব্রাক অফিসের দক্ষিণ পাশে আবুল কাসেম মুহুরীর বাড়িতে গত ০৫ জানুয়ারি অপরিচিত এক ব্যক্তি অফিস করার নামে বাড়ীর একটি অংশ ভাড়া নেয়।
এরপর সেখানে “ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি”নামে এনজিও রাতের আঁধারে একটি ভুয়া অফিস খুলে বসেন প্রতারক।
এ সময় অফিস ম্যানেজার করার জন্য নিয়োগ দেন মোঃ আশিকুর রহমান। কয়েকদিন অফিস চলার পর প্রতারকে কার্যকলাপে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই সুযোগে কয়েক দিনের মাথায়
পূর্ণমতি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান, নাল্লা এলাকার মিজানুর রহমান, নাগাইশ এলাকার মোঃ ফেরদৌস, ইয়াসিন মিয়া, শাহ আলম, তোফাজ্জল হোসেন, কাইয়ুম, মুমিন মিয়া, আলম হোসেন, মহিবুল হাসান, কায়ছার মিয়া, ডগ্রাপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান, লাভলী আক্তার, পপি আক্তারসহ প্রায় ১৭০ থেকে ২৮০ জনের বিভিন্ন অংকের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
ভুক্তভোগী একজন জানান, আমি গরিব মানুষ আমি প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমি এর বিচার চাই। আরেক ভুক্তভোগী জানান, প্রতারক গত ৪ দিন আগে আমাদের গ্রামে এসে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ ও পণ্য দেওয়ার নামে কয়েকজনের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা নেয়। এখন শুনি এটি ভুয়া এনজিও। আমরা এই প্রতারককে খুঁজে বের করে তার দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তি চাই।
শাহ আলম বলেন, আমরা সহজ সরল মনে
ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামে একটি এনজিও ঋণ পাওয়ার আশায় বেশ কয়েকজন কয়েক হাজার টাকা সঞ্চয় দেই। সেই এনজিও থেকে আমাদের কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা হয় কিন্তু এখন দেখি সব ভুয়া।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামে এনজিও কীভাবে কোন কাগজ পত্র ছাড়াই অপরিচিত ঐ ব্যক্তিকে অফিস করার জন্য বাড়ী ভাড়া দিলো এবং কীভাবে অফিস এর কার্যক্রম পরিচালনা হলো। এর দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে আবুল কাশেম মুহুরী ও তার ছেলে মোঃ সৌরভ হোসেন তারাও জড়িত থাকতে পারে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করবো বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের আইনদের আওতায় আনার জন্য।
বাড়ীর মালিক আবুল কাশেম মুহুরী কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কিছুই জানি না।
বাড়ীর মালিকের ছেলে সৈকত হোসেন বলেন, অপরিচিত এক ব্যক্তি হঠাৎ করে এসে বলেন তার কয়েকটি রুম লাগবে অফিস করার জন্য। তারা ১৫ জানুয়ারি চুক্তি করার কথা ছিলো। সে আমার শর্তে রাজি হলে তাকে আমি বলি আপনি আপনার মালামাল রাখতে পারেন। কিন্তু চুক্তি না হওয়া আগেই তারা পালিয়ে যায়। গ্রাহকদের টাকা বিষয়ে আমরা জানি না। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স.ম আজহারুল ইসলাম জানান,একটি ভুয়া এনজিও গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, উপজেলার সকলের প্রতি আহবান করবো যে কোন এনজিওতে টাকা লেনদেন করলে অবশ্যই নির্বাহী অফিসারে কোন প্রত্যায়ন আছে কি না ভালো ভাবে যাচাই করবেন। উপজেলাবাসীকে আরও সর্তক হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

  • ব্রাহ্মণপাড়া